দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহ্র নামে,
নিচের ▶ বাটনে ক্লিক করুন২০-১ : তা - হা,
২০-২ : তুমি ক্লেশ পাইবে এইজন্য আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করি নাই,
২০-৩ : বরং যে ভয় করে কেবল তাহার উপদেশার্থে,
২০-৪ : যিনি পৃথিবী ও সমুচ্চ আকাশমণ্ডলী সৃষ্টি করিয়াছেন তাঁহার নিকট হইতে ইহা অবতীর্ণ।
২০-৫ : দয়াময় আর্শে সমাসীন।
২০-৬ : যাহা আছে আকাশমণ্ডলীতে, পৃথিবীতে, এই দুইয়ের অন্তর্বর্তী স্থানে ও ভূগর্ভে তাহা তাঁহারই।
২০-৭ : যদি তুমি উচ্চকণ্ঠে কথা বল, তবে তিনি তো যাহা গুপ্ত ও অব্যক্ত সকলই জানেন।
২০-৮ : আল্লাহ্ তিনি ব্যতিত অন্য অন্য কোন ইলাহ্ নাই, সুন্দর সুন্দর নাম তাঁহারই।
২০-৯ : মূসার বৃত্তান্ত তোমার নিকট পৌঁছিয়াছে কি?
২০-১০ : সে যখন আগুন দেখিল তখন তাহার পরিবারবর্গকে বলিল, ‘তোমরা এখানে থাক আমি আগুন দেখিয়াছি। সম্ভবত আমি তোমাদের জন্য উহা হইতে কিছু জ্বলন্ত অঙ্গার আনিতে পারিব অথবা আমি আগুনের নিকটে কোন পথনির্দেশ পাইব।’
২০-১১ : অতঃপর যখন সে আগুনের নিকট আসিল তখন আহ্বান করিয়া বলা হইল, ‘হে মূসা!
২০-১২ : আমিই তোমার প্রতিপালক, অতএব তোমার পাদুকা খুলিয়া ফেল, কারণ তুমি পবিত্র ‘তুওয়া’ উপত্যকায় রহিয়াছ।
২০-১৩ : ‘এবং আমি তোমাকে মনোনীত করিয়াছি। অতএব যাহা ওহী প্রেরণ করা হইতেছে তুমি তাহা মনোযোগের সঙ্গে শ্রবণ কর।
২০-১৪ : ‘আমিই আল্লাহ্ আমি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নাই। অতএব আমার ‘ইবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর।
২০-১৫ : ‘কিয়ামত অবশ্যম্ভাবী, আমি ইহা গোপন রাখিতে চাহি যাহাতে প্রত্যেকেই নিজ কর্মানুযায়ী ফল লাভ করিতে পারে।
২০-১৬ : ‘সুতরাং যে ব্যক্তি কিয়ামতে বিশ্বাস করে না ও নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, সে যেন তোমাকে উহাতে বিশ্বাস স্থাপনে নিবৃত্ত না করে, নিবৃত্ত হইলে তুমি ধ্বংস হইয়া যাইবে।
২০-১৭ : ‘হে মূসা! তোমার দক্ষিণ হস্তে উহা কী?’
২০-১৮ : সে বলিল, ‘উহা আমার লাঠি; আমি ইহাতে ভর দেই এবং ইহা দ্বারা আঘাত করিয়া আমি আমার মেষপালের জন্য বৃক্ষপত্র ফেলিয়া থাকি এবং ইহা আমার অন্যান্য কাজেও লাগে।’
২০-১৯ : আল্লাহ্ বলিলেন, ‘হে মুসা ! তুমি ইহা নিক্ষেপ কর।’
২০-২০ : অতঃপর সে উহা নিক্ষেপ করিল, সঙ্গে সঙ্গে উহা সাপ হইয়া ছুটিতে লাগিল,
২০-২১ : তিনি বলিলেন, ‘তুমি ইহাকে ধর, ভয় করিও না, আমি ইহাকে ইহার পূর্বরূপে ফিরাইয়া দিব।
২০-২২ : ‘এবং তোমার হাত তোমার বগলে রাখ, ইহা বাহির হইয়া আসিবে নির্মল উজ্জ্বল হইয়া অপর এক নিদর্শনস্বরূপ।
২০-২৩ : ‘ইহা এইজন্য যে, আমি তোমাকে দেখাইব আমার মহানিদর্শনগুলির কিছু।
২০-২৪ : ‘ফির‘আওনের নিকট যাও, সে তো সীমালংঘন করিয়াছে।’
২০-২৫ : মূসা বলিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার বক্ষ প্রশস্ত করিয়া দাও।
২০-২৬ : এবং আমার কর্ম সহজ করিয়া দাও।
২০-২৭ : আমার জিহ্বার জড়তা দূর করিয়া দাও।
২০-২৮ : যাহাতে উহারা আমার কথা বুঝিতে পারে।
২০-২৯ : আমার জন্য করিয়া দাও একজন সাহায্যকারী আমার স্বজনবর্গের মধ্য হইতে;
২০-৩০ : আমার ভ্রাতা হারূনকে;
২০-৩১ : তাহার দ্বারা আমার শক্তি সুদৃঢ় কর,
২০-৩২ : ও তাহাকে আমার কর্মে অংশী কর,
২০-৩৩ : যাহাতে আমরা তোমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করিতে পারি প্রচুর;
২০-৩৪ : এবং তোমাকে স্মরণ করিতে পারি অধিক।
২০-৩৫ : ‘তুমি তো আমাদের সম্যক দ্রষ্টা।’
২০-৩৬ : তিনি বলিলেন, হে মূসা! তুমি যাহা চাহিয়াছ তাহা তোমাকে দেওয়া হইল।
২০-৩৭ : এবং আমি তো তোমার প্রতি আরও একবার অনুগ্রহ করিয়াছিলাম;
২০-৩৮ : যখন আমি তোমার মাতাকে জানাইয়াছিলাম যাহা ছিল জানাইবার,
২০-৩৯ : ‘যে, তুমি তাহাকে সিন্দুকের মধ্যে রাখ, অতঃপর উহা দরিয়ায় ভাসাইয়া দাও যাহাতে দরিয়া উহাকে তীরে ঠেলিয়া দেয়, উহাকে আমার শত্রু ও উহার শত্রু লইয়া যাইবে। আমি আমার নিকট হইতে তোমার উপর ভালবাসা ঢালিয়া দিয়াছিলাম, যাহাতে তুমি আমার তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হও।’
২০-৪০ : ‘যখন তোমার ভগ্নী আসিয়া বলিল, ‘আমি কি তোমাদেরকে বলিয়া দিব কে এই শিশুর ভার লইবে?’ তখন আমি তোমাকে তোমার মায়ের নিকট ফিরাইয়া দিলাম যাহাতে তাহার চক্ষু জুড়ায় এবং সে দুঃখ না পায়; এবং তুমি এক ব্যক্তিকে হত্যা করিয়াছিলে; অতঃপর আমি তোমাকে মনঃপীড়া হইতে মুক্তি দেই, আমি তোমাকে বহু পরীক্ষা করিয়াছি। অতঃপর তুমি কয়েক বৎসর মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে ছিলে, হে মূসা! ইহার পরে তুমি নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হইলে।
২০-৪১ : ‘এবং আমি তোমাকে আমার নিজের জন্য প্রস্তুত করিয়া লইয়াছি।
২০-৪২ : ‘তুমি ও তোমার ভ্রাতা আমার নিদর্শনসহ যাত্রা কর এবং আমার স্মরণে শৈথিল্য করিও না,
২০-৪৩ : ‘তোমরা উভয়ে ফির‘আওনের নিকট যাও, সে তো সীমা - লংঘন করিয়াছে।
২০-৪৪ : ‘তোমরা তাহার সঙ্গে নম্র কথা বলিবে, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করিবে অথবা ভয় করিবে।’
২০-৪৫ : তাহারা বলিল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তো আশংকা করি সে আমাদের উপর বাড়াবাড়ি করিবে অথবা অন্যায় আচরণে সীমালংঘন করিবে।’
২০-৪৬ : তিনি বলিলেন, ‘তোমরা ভয় করিও না, আমি তো তোমাদের সঙ্গে আছি, আমি শুনি ও আমি দেখি।’
২০-৪৭ : সুতরাং তোমরা তাহার নিকট যাও এবং বল, ‘আমরা তোমার প্রতিপালকের রাসূল, সুতরাং আমাদের সঙ্গে বনী ইস্রাঈলকে যাইতে দাও এবং তাহাদেরকে কষ্ট দিও না, আমরা তো তোমার নিকট আনিয়াছি তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে নিদর্শন এবং শান্তি তাহাদের প্রতি যাহারা অনুসরণ করে সৎপথ।
২০-৪৮ : ‘আমাদের প্রতি ওহী প্রেরণ করা হইয়াছে যে, শাস্তি তো তাহার জন্য, যে মিথ্যা আরোপ করে ও মুখ ফিরাইয়া নেয়।’
২০-৪৯ : ফির‘আওন বলিল, ‘হে মূসা! কে তোমাদের প্রতিপালক?’
২০-৫০ : মূসা বলিল, ‘আমাদের প্রতিপালক তিনি, যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তাহার আকৃতি দান করিয়াছেন, অতঃপর পথনির্দেশ করিয়াছেন।’
২০-৫১ : ফির‘আওন বলিল, ‘তাহা হইলে অতীত যুগের লোকদের অবস্থা কী?’
২০-৫২ : মূসা বলিল, ‘ইহার জ্ঞান আমার প্রতিপালকের নিকট কিতাবে রহিয়াছে, আমার প্রতিপালক ভুল করেন না এবং বিস্মৃতও হন না।’
২০-৫৩ : ‘যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করিয়াছেন বিছানা এবং উহাতে করিয়া দিয়াছেন তোমাদের চলিবার পথ, তিনি আকাশ হইতে বারি বর্ষণ করেন।’ এবং আমি উহা দ্বারা বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদ উৎপন্ন করি।
২০-৫৪ : তোমরা আহার কর ও তোমাদের গবাদিপশু চরাও; অবশ্যই ইহাতে নিদর্শন আছে বিবেকসম্পন্নদের জন্য।
২০-৫৫ : আমি মৃত্তিকা হইতে তোমাদেরকে সৃষ্টি করিয়াছি, উহাতেই তোমাদেরকে ফিরাইয়া দিব এবং উহা হইতে পুনর্বার তোমাদেরকে বাহির করিব।
২০-৫৬ : আমি তো তাহাকে আমার সমস্ত নিদর্শন দেখাইয়াছিলাম; কিন্তু সে মিথ্যা আরোপ করিয়াছে ও অমান্য করিয়াছে।
২০-৫৭ : সে বলিল, ‘হে মূসা! তুমি কি আমাদের নিকট আসিয়াছ তোমার জাদু দ্বারা আমাদেরকে আমাদের দেশ হইতে বহিষ্কার করিয়া দিবার জন্য?
২০-৫৮ : ‘আমরাও অবশ্যই তোমার নিকট উপস্থিত করিব ইহার অনুরূপ জাদু, সুতরাং আমাদের ও তোমার মধ্যে নির্ধারণ কর এক নির্দিষ্ট সময় এক মধ্যবর্তী স্থানে, যাহার ব্যতিক্রম আমরাও করিব না এবং তুমিও করিবে না।’
২০-৫৯ : মূসা বলিল, ‘তোমাদের নির্ধারিত সময় উৎসবের দিন এবং যেই দিন পূর্বাহ্নে জনগণকে সমবেত করা হইবে।’
২০-৬০ : অতঃপর ফির‘আওন উঠিয়া গেল এবং পরে তাহার কৌশলসমূহ একত্র করিল, অতঃপর আসিল।
২০-৬১ : মূসা উহাদেরকে বলিল, ‘দুর্ভোগ তোমাদের! তোমরা আল্লাহ্র প্রতি মিথ্যা আরোপ করিও না। করিলে, তিনি তোমাদেরকে শাস্তি দ্বারা সমূলে ধ্বংস করিবেন। যে মিথ্যা উদ্ভাবন করিয়াছে সে - ই ব্যর্থ হইয়াছে।’
২০-৬২ : উহারা নিজেদের মধ্যে নিজেদের কর্ম সম্বন্ধে বিতর্ক করিল এবং উহারা গোপনে পরামর্শ করিল।
২০-৬৩ : উহারা বলিল, ‘এই দুইজন অবশ্যই জাদুকর, তাহারা চাহে তাহাদের জাদু দ্বারা তোমাদেরকে তোমাদের দেশ হইতে বহিষ্কার করিতে এবং তোমাদের উৎকৃষ্ট জীবন - ব্যবস্থা ধ্বংস করিতে।
২০-৬৪ : ‘অতএব তোমরা তোমাদের জাদুক্রিয়া সংহত কর, অতঃপর সারিবদ্ধ হইয়া উপস্থিত হও এবং যে আজ জয়ী হইবে সে - ই সফল হইবে।’
২০-৬৫ : উহারা বলিল, ‘হে মূসা! হয় তুমি নিক্ষেপ কর অথবা প্রথমে আমরাই নিক্ষেপ করি।’
২০-৬৬ : মূসা বলিল, ‘বরং তোমরাই নিক্ষেপ কর।’ উহাদের জাদু - প্রভাবে অকস্মাৎ মূসার মনে হইল উহাদের দড়ি ও লাঠিগুলি ছুটাছুটি করিতেছে।
২০-৬৭ : মূসা তাহার অন্তরে কিছু ভীতি অনুভব করিল।
২০-৬৮ : আমি বলিলাম, ‘ভয় করিও না, তুমিই প্রবল।’
২০-৬৯ : ‘তোমার দক্ষিণ হস্তে যাহা আছে তাহা নিক্ষেপ কর, ইহা উহারা যাহা করিয়াছে তাহা গ্রাস করিয়া ফেলিবে। উহারা যাহা করিয়াছে তাহা তো কেবল জাদুকরের কৌশল। জাদুকর যেখানেই আসুক, সফল হইবে না।’
২০-৭০ : অতঃপর জাদুকরেরা সিজ্দাবনত হইল ও বলিল, ‘আমরা হারূন ও মূসার প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনিলাম।’
২০-৭১ : ফির‘আওন বলিল, ‘কী, আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেওয়ার পূর্বেই তোমরা মূসাতে বিশ্বাস স্থাপন করিলে! দেখিতেছি, সে তো তোমাদের প্রধান, সে তোমাদেরকে জাদু শিক্ষা দিয়াছে। সুতরাং আমি তো তোমাদের হস্তপদ বিপরীত দিক হইতে কর্তন করিবই এবং আমি তোমাদেরকে খর্জুর বৃক্ষের কাণ্ডে শূলবিদ্ধ করিবই এবং তোমরা অবশ্যই জানিতে পারিবে আমাদের মধ্যে কাহার শাস্তি কঠোরতর ও অধিক স্থায়ী।’
২০-৭২ : তাহারা বলিল, ‘আমাদের নিকট যে স্পষ্ট নিদর্শন আসিয়াছে তাহার উপর এবং যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করিয়াছেন তাঁহার উপর তোমাকে আমরা কিছুতেই প্রাধান্য দিব না। সুতরাং তুমি কর যাহা তুমি করিতে চাও। তুমি তো কেবল এই পার্থিব জীবনের উপর কর্তৃত্ব করিতে পার।’
২০-৭৩ : ‘আমরা নিশ্চয়ই আমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনিয়াছি যাহাতে তিনি ক্ষমা করেন আমাদের অপরাধ এবং তুমি আমাদেরকে যে জাদু করিতে বাধ্য করিয়াছ তাহা। আর আল্লাহ্ শ্রেষ্ঠ ও চিরস্থায়ী।’
২০-৭৪ : যে তাহার প্রতিপালকের নিকট অপরাধী হইয়া উপস্থিত হইবে তাহার জন্য তো আছে জাহান্নাম, সেখানে সে মরিবেও না, বাঁচিবেও না।
২০-৭৫ : এবং যাহারা তাঁহার নিকট উপস্থিত হইবে মু’মিন অবস্থায় সৎকর্ম করিয়া, তাহাদের জন্য আছে সমুচ্চ মর্যাদা -
২০-৭৬ : স্থায়ী জান্নাত, যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে এবং এই পুরস্কার তাহাদেরই, যাহারা পবিত্র।
২০-৭৭ : আমি অবশ্যই মূসার প্রতি প্রত্যাদেশ করিয়াছিলাম এই মর্মে যে, আমার বান্দাদেরকে লইয়া রজনীযোগে বহির্গত হও এবং তাহাদের জন্য সমুদ্রের মধ্য দিয়া এক শুষ্ক পথ নির্মাণ কর। পশ্চাৎ হইতে আসিয়া তোমাকে ধরিয়া ফেলা হইবে - এই আশংকা করিও না এবং ভয়ও করিও না।
২০-৭৮ : অতঃপর ফির‘আওন তাহার সৈন্যবাহিনীসহ তাহাদের পশ্চাদ্ধাবন করিল, অতঃপর সমুদ্র উহাদেরকে সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত করিল।
২০-৭৯ : আর ফির‘আওন তাহার সম্প্রদায়কে পথভ্রষ্ট করিয়াছিল এবং সৎপথ দেখায় নাই।
২০-৮০ : হে বনী ইসরাঈল! আমি তো তোমাদেরকে শত্রু হইতে উদ্ধার করিয়াছিলাম, আমি তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলাম আত্ তূর পর্বতের দক্ষিণ পার্শ্বে এবং তোমাদের নিকট মান্না ও সাল্ওয়া প্রেরণ করিয়াছিলাম,
২০-৮১ : তোমাদেরকে যাহা দান করিয়াছি তাহা হইতে ভাল ভাল বস্তু আহার কর এবং এই বিষয়ে সীমালংঘন করিও না, করিলে তোমাদের উপর আমার ক্রোধ অবধারিত এবং যাহার উপর আমার ক্রোধ অবধারিত সে তো ধ্বংস হইয়া যায়।
২০-৮২ : এবং আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল তাহার প্রতি, যে তওবা করে, ঈমান আনে, সৎকর্ম করে ও সৎপথে অবিচলিত থাকে।
২০-৮৩ : হে মূসা! তোমার সম্প্রদায়কে পশ্চাতে ফেলিয়া তোমাকে ত্বরা করিতে বাধ্য করিল কিসে?
২০-৮৪ : সে বলিল, ‘এই তো উহারা আমার পশ্চাতে এবং হে আমার প্রতিপালক! আমি ত্বরায় তোমার নিকট আসিলাম, তুমি সন্তুষ্ট হইবে এইজন্য।’
২০-৮৫ : তিনি বলিলেন, ‘আমি তো তোমার সম্প্রদায়কে পরীক্ষায় ফেলিয়াছি তোমার চলিয়া আসার পর এবং সামিরী উহাদেরকে পথভ্রষ্ট করিয়াছে।’
২০-৮৬ : অতঃপর মূসা তাহার সম্প্রদায়ের নিকট ফিরিয়া গেল ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ হইয়া। সে বলিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমাদের প্রতিপালক কি তোমাদেরকে এক উত্তম প্রতিশ্রুতি দেন নাই? তবে কি প্রতিশ্রুতিকাল তোমাদের নিকট সুদীর্ঘ হইয়াছে, না তোমরা চাহিয়াছ তোমাদের প্রতি আপতিত হউক তোমাদের প্রতিপালকের ক্রোধ, যে কারণে তোমরা আমার প্রতি প্রদত্ত অঙ্গীকার ভঙ্গ করিলে?’
২০-৮৭ : উহারা বলিল, ‘আমরা তোমার প্রতি প্রদত্ত অঙ্গীকার স্বেচ্ছায় ভঙ্গ করি নাই ; তবে আমাদের উপর চাপাইয়া দেওয়া হইয়াছিল লোকের অলংকারের বোঝা এবং আমরা উহা অগ্নিকুন্ড নিক্ষেপ করি, অনুরূপভাবে সামিরীও নিক্ষেপ করে।
২০-৮৮ : ‘অতঃপর সে উহাদের জন্য গড়িল এক গো - বৎস, এক অবয়ব, যাহা হাম্বা রব করিত।’ উহারা বলিল, ‘ইহা তোমাদের ইলাহ্ এবং মূসারও ইলাহ্, কিন্তু মূসা ভুলিয়া গিয়াছে।’
২০-৮৯ : তবে কি উহারা ভাবিয়া দেখে না যে, উহা তাহাদের কথায় সাড়া দেয় না এবং তাহাদের কোন ক্ষতি অথবা উপকার করিবার ক্ষমতা রাখে না?
২০-৯০ : হারূন উহাদেরকে পূর্বেই বলিয়াছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! ইহা দ্বারা তো কেবল তোমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলা হইয়াছে। তোমাদের প্রতিপালক তো দয়াময়; সুতরাং তোমরা আমার অনুসরণ কর এবং আমার আদেশ মানিয়া চল।’
২০-৯১ : উহারা বলিয়াছিল, ‘আমাদের নিকট মূসা ফিরিয়া না আসা পর্যন্ত আমরা ইহার পূজা হইতে কিছুতেই বিরত হইব না।’
২০-৯২ : মূসা বলিল, ‘হে হারূন! তুমি যখন দেখিলে উহারা পথভ্রষ্ট হইয়াছে তখন কিসে তোমাকে নিবৃত্ত করিল -
২০-৯৩ : ‘আমার অনুসরণ করা হইতে? তবে কি তুমি আমার আদেশ অমান্য করিলে?’
২০-৯৪ : হারূন বলিল, ‘হে আমার সহোদর! আমার শ্মশ্রু ও কেশ ধরিও না। আমি আশংকা করিয়াছিলাম যে, তুমি বলিবে, ‘তুমি বনী ইসরাঈলদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করিয়াছ ও তুমি আমার বাক্য পালনে যত্নবান হও নাই।’
২০-৯৫ : মূসা বলিল, ‘হে সামিরী! তোমার ব্যাপার কী?’
২০-৯৬ : সে বলিল, ‘আমি দেখিয়াছিলাম যাহা উহারা দেখে নাই, অতঃপর আমি সেই দূতের পদচিহ্ন হইতে একমুষ্টি লইয়াছিলাম এবং আমি উহা নিক্ষেপ করিয়াছিলাম; আমার মন আমার জন্য শোভন করিয়াছিল এইরূপ করা।’
২০-৯৭ : মূসা বলিল, ‘দূর হও; তোমার জীবদ্দশায় তোমার জন্য ইহাই রহিল যে, তুমি বলিবে, ‘আমি অস্পৃশ্য’, এবং তোমার জন্য রহিল এক নির্দিষ্ট কাল, তোমার বেলায় যাহার ব্যতিক্রম হইবে না এবং তুমি তোমার সেই ইলাহের প্রতি লক্ষ্য কর যাহার পূজায় তুমি রত ছিলে; আমরা উহাকে জ্বালাইয়া দিবই, অতঃপর উহাকে বিক্ষিপ্ত করিয়া সাগরে নিক্ষেপ করিবই।’
২০-৯৮ : তোমাদের ইলাহ্ তো কেবল আল্লাহ্ই যিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নাই, তাঁহার জ্ঞান সর্ববিষয়ে ব্যাপ্ত।
২০-৯৯ : পূর্বে যাহা ঘটিয়াছে তাহার সংবাদ আমি এইভাবে তোমার নিকট বিবৃত করি এবং আমি আমার নিকট হইতে তোমাকে দান করিয়াছি উপদেশ,
২০-১০০ : ইহা হইতে যে বিমুখ হইবে সে অবশ্যই কিয়ামতের দিন মহাভার বহন করিবে।
২০-১০১ : উহাতে উহারা স্থায়ী হইবে এবং কিয়ামতের দিন এই বোঝা উহাদের জন্য হইবে কত মন্দ!
২০-১০২ : যেদিন শিংগায় ফুৎকার দেওয়া হইবে এবং যেই দিন আমি অপরাধীদেরকে দৃষ্টিহীন অবস্থায় সমবেত করিব।
২০-১০৩ : সেই দিন উহারা নিজেদের মধ্যে চুপিচুপি বলাবলি করিবে, ‘তোমরা মাত্র দশ দিন অবস্থান করিয়াছিলে।’
২০-১০৪ : আমি ভাল জানি উহারা কি বলিবে, উহাদের মধ্যে যে অপেক্ষাকৃত সৎপথে ছিল সে বলিবে, ‘তোমরা মাত্র একদিন অবস্থান করিয়াছিলে।’
২০-১০৫ : উহারা তোমাকে পর্বতসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল, ‘আমার প্রতিপালক উহাদেরকে সমূলে উৎপাটন করিয়া বিক্ষিপ্ত করিয়া দিবেন।
২০-১০৬ : ‘অতঃপর তিনি উহাকে পরিণত করিবেন মসৃণ সমতল ময়দানে,
২০-১০৭ : ‘যাহাতে তুমি বক্রতা ও উচ্চতা দেখিবে না।’
২০-১০৮ : সেই দিন উহারা আহ্বানকারীর অনুসরণ করিবে, এই ব্যাপারে এদিক - ওদিক করিতে পারিবে না। দয়াময়ের সম্মুখে সকল শব্দ স্তব্ধ হইয়া যাইবে; সুতরাং মৃদু পদধ্বনি ব্যতীত তুমি কিছুই শুনিবে না।
২০-১০৯ : দয়াময় যাহাকে অনুমতি দিবেন ও যাহার কথা তিনি পসন্দ করিবেন সে ব্যতীত কাহারও সুপারিশ সেই দিন কোন কাজে আসিবে না।
২০-১১০ : তাহাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যাহা কিছু আছে তাহা তিনি অবগত, কিন্তু উহারা জ্ঞান দ্বারা তাঁহাকে আয়ত্ত করিতে পারে না।
২০-১১১ : চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারকের নিকট সকলেই হইবে অধোবদন এবং সে - ই ব্যর্থ হইবে, যে জুলুমের ভার বহন করিবে।
২০-১১২ : এবং যে সৎকর্ম করে মু’মিন হইয়া, তাহার কোন আশংকা নাই অবিচারের এবং অন্য কোন ক্ষতির।
২০-১১৩ : এইরূপেই আমি কুরআনকে অবতীর্ণ করিয়াছি আরবী ভাষায় এবং উহাতে বিশদভাবে বিবৃত করিয়াছি সতর্কবাণী যাহাতে উহারা ভয় করে অথবা ইহা হয় উহাদের জন্য উপদেশ।
২০-১১৪ : আল্লাহ্ অতি মহান, প্রকৃত অধিপতি। তোমার প্রতি আল্লাহ্র ওহী সম্পূর্ণ হইবার পূর্বে কুরআন পাঠে তুমি ত্বরা করিও না এবং বল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে জ্ঞানে সমৃদ্ধ কর।’
২০-১১৫ : আমি তো ইতিপূর্বে আদমের প্রতি নির্দেশ দান করিয়াছিলাম, কিন্তু সে ভুলিয়া গিয়াছিল; আমি তাহাকে সংকল্পে দৃঢ় পাই নাই।
২০-১১৬ : স্মরণ কর, যখন ফিরিশ্তাগণকে বলিলাম, ‘আদমের প্রতি সিজ্দা কর,’ তখন ইবলীস ব্যতীত সকলেই সিজদা করিল, সে অমান্য করিল।
২০-১১৭ : অতঃপর আমি বলিলাম, ‘হে আদম! নিশ্চয়ই এ তোমার ও তোমার স্ত্রীর শত্রু, সুতরাং সে যেন কিছুতেই তোমাদেরকে জান্নাত হইতে বাহির করিয়া না দেয়, দিলে তোমরা দুঃখ - কষ্ট পাইবে।
২০-১১৮ : ‘তোমার জন্য ইহাই রহিল যে, তুমি জান্নাতে ক্ষুধার্তও হইবে না ও নগ্নও হইবে না;
২০-১১৯ : এবং সেখানে পিপাসার্ত হইবে না এবং রৌদ্র - ক্লিষ্টও হইবে না।’
২০-১২০ : অতঃপর শয়তান তাহাকে কুমন্ত্রণা দিল; সে বলিল, ‘হে আদম! আমি কি তোমাকে বলিয়া দিব অনন্ত জীবনপ্রদ বৃক্ষের কথা ও অক্ষয় রাজ্যের কথা?’
২০-১২১ : অতঃপর তাহারা উভয়ে উহা হইতে ভক্ষণ করিল; তখন তাহাদের লজ্জাস্থান তাহাদের নিকট প্রকাশ হইয়া পড়িল এবং তাহারা জান্নাতের বৃক্ষপত্র দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করিতে লাগিল। আদম তাহার প্রতিপালকের হুকুম অমান্য করিল, ফলে সে ভ্রমে পতিত হইল।
২০-১২২ : ইহার পর তাহার প্রতিপালক তাহাকে মনোনীত করিলেন, তাহার তওবা কবুল করিলেন ও তাহাকে পথনির্দেশ করিলেন।
২০-১২৩ : তিনি বলিলেন, ‘তোমরা উভয়ে একই সঙ্গে জান্নাত হইতে নামিয়া যাও। তোমরা পরস্পর পরস্পরের শত্রু। পরে আমার পক্ষ হইতে তোমাদের নিকট সৎপথের নির্দেশ আসিলে যে আমার পথ অনুসরণ করিবে সে বিপথগামী হইবে না ও দুঃখ - কষ্ট পাইবে না।
২০-১২৪ : ‘যে আমার স্মরণে বিমুখ থাকিবে, অবশ্যই তাহার জীবন - যাপন হইবে সংকুচিত এবং আমি তাহাকে কিয়ামতের দিন উত্থিত করিব অন্ধ অবস্থায় ।’
২০-১২৫ : সে বলিবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করিলে? আমি তো ছিলাম চক্ষুষ্মান।’
২০-১২৬ : তিনি বলিবেন, ‘এইরূপই আমার নিদর্শনাবলী তোমার নিকট আসিয়াছিল, কিন্তু তুমি উহা ভুলিয়া গিয়াছিলে এবং সেইভাবে আজ তুমিও বিস্মৃত হইলে।’
২০-১২৭ : এবং এইভাবেই আমি প্রতিফল দেই তাহাকে, যে বাড়াবাড়ি করে ও তাহার প্রতিপালকের নিদর্শনে বিশ্বাস স্থাপন করে না। পরকালের শাস্তি তো অবশ্যই কঠিনতর ও অধিক স্থায়ী।
২০-১২৮ : ইহাও কি তাহাদেরকে সৎপথ দেখাইল না যে, আমি ইহাদের পূর্বে ধ্বংস করিয়াছি কত মানবগোষ্ঠী যাহাদের বাসভূমিতে ইহারা বিচরণ করিয়া থাকে? অবশ্যই ইহাতে বিবেকসম্পন্নদের জন্য আছে নিদর্শন।
২০-১২৯ : তোমার প্রতিপালকের পূর্বসিদ্ধান্ত ও একটা কাল নির্ধারিত না থাকিলে অবশ্যম্ভাবী হইত আশু শাস্তি।
২০-১৩০ : সুতরাং উহারা যাহা বলে, সে বিষয়ে তুমি ধৈর্য ধারণ কর এবং সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর এবং রাত্রিকালে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর, এবং দিবসের প্রান্তসমূহেও, যাহাতে তুমি সন্তুষ্ট হইতে পার।
২০-১৩১ : তুমি তোমার চক্ষুদ্বয় কখনও প্রসারিত করিও না উহার প্রতি, যাহা আমি তাহাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে পার্থিব জীবনের সৌন্দর্যস্বরূপ উপভোগের উপকরণ হিসাবে দিয়াছি, তদ্দ্বারা তাহাদেরকে পরীক্ষা করিবার জন্য। তোমার প্রতিপালক - প্রদত্ত জীবনোপকরণ উৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী।
২০-১৩২ : এবং তোমার পরিবারবর্গকে সালাতের আদেশ দাও ও উহাতে অবিচলিত থাক, আমি তোমার নিকট কোন জীবনোপকরণ চাই না; আমিই তোমাকে জীবনোপকরণ দেই এবং শুভ পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্য।
২০-১৩৩ : উহারা বলে, ‘সে তাহার প্রতিপালকের নিকট হইতে আমাদের নিকট কোন নিদর্শন আনয়ন করে না কেন?’ উহাদের নিকট কি আসে নাই সুস্পষ্ট প্রমাণ যাহা আছে পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহে?
২০-১৩৪ : যদি আমি উহাদেরকে ইতিপূর্বে শাস্তি দ্বারা ধ্বংস করিতাম তবে উহারা বলিত, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের নিকট একজন রাসূল প্রেরণ করিলে না কেন? করিলে আমরা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হইবার পূর্বে তোমার নিদর্শন মানিয়া চলিতাম।’
২০-১৩৫ : বল, ‘প্রত্যেকেই প্রতীক্ষা করিতেছে, সুতরাং তোমরাও প্রতীক্ষা কর। অতঃপর তোমরা জানিতে পারিবে কাহারা রহিয়াছে সরল পথে এবং কাহারা সৎপথ অবলম্বন করিয়াছে।’