بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
নিচের ▶ বাটনে ক্লিক করুনদয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহ্র নামে,
طٰسٓمٓ﴿۱﴾
২৮-১ : তা - সীন - মীম;
تِلۡكَ اٰيٰتُ الۡـكِتٰبِ الۡمُبِيۡنِ﴿۲﴾
২৮-২ : এই আয়াতগুলি সুস্পষ্ট কিতাবের।
نَـتۡلُوۡا عَلَيۡكَ مِنۡ نَّبَاِ مُوۡسٰى وَفِرۡعَوۡنَ بِالۡحَـقِّ لِقَوۡمٍ يُّؤۡمِنُوۡنَ﴿۳﴾
২৮-৩ : আমি তোমার নিকট মূসা ও ফির‘আওনের কিছু বৃত্তান্ত যথাযথভাবে বিবৃত করিতেছি, মু’মিন সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে।
اِنَّ فِرۡعَوۡنَ عَلَا فِى الۡاَرۡضِ وَجَعَلَ اَهۡلَهَا شِيَـعًا يَّسۡتَضۡعِفُ طَآٮِٕفَةً مِّنۡهُمۡ يُذَبِّحُ اَبۡنَآءَهُمۡ وَيَسۡتَحۡىٖ نِسَآءَهُمۡ ؕ اِنَّهٗ كَانَ مِنَ الۡمُفۡسِدِيۡنَ﴿۴﴾
২৮-৪ : ফির‘আওন দেশে পরাক্রমশালী হইয়াছিল এবং সেখানকার অধিবাসীবৃন্দকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করিয়া উহাদের একটি শ্রেণীকে সে হীনবল করিয়াছিল; উহাদের পুত্রগণকে সে হত্যা করিত এবং নারীগণকে জীবিত থাকিতে দিত। সে তো ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারী।
وَنُرِيۡدُ اَنۡ نَّمُنَّ عَلَى الَّذِيۡنَ اسۡتُضۡعِفُوۡا فِى الۡاَرۡضِ وَنَجۡعَلَهُمۡ اَٮِٕمَّةً وَّنَجۡعَلَهُمُ الۡوٰرِثِيۡنَۙ ﴿۵﴾
২৮-৫ : আমি ইচ্ছা করিলাম, সে দেশে যাহাদেরকে হীনবল করা হইয়াছিল, তাহাদের প্রতি অনুগ্রহ করিতে, তাহাদেরকে নেতৃত্ব দান করিতে ও উত্তরাধিকারী করিতে;
وَنُمَكِّنَ لَهُمۡ فِى الۡاَرۡضِ وَنُرِىَ فِرۡعَوۡنَ وَهَامٰنَ وَجُنُوۡدَهُمَا مِنۡهُمۡ مَّا كَانُوۡا يَحۡذَرُوۡنَ ﴿۶﴾
২৮-৬ : এবং তাহাদেরকে দেশে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করিতে, আর ফির‘আওন, হামান ও তাহাদের বাহিনীকে তাহা দেখাইয়া দিতে, যাহা উহাদের নিকট তাহারা আশংকা করিত।
وَاَوۡحَيۡنَاۤ اِلٰٓى اُمِّ مُوۡسٰٓى اَنۡ اَرۡضِعِيۡهِۚ فَاِذَا خِفۡتِ عَلَيۡهِ فَاَ لۡقِيۡهِ فِى الۡيَمِّ وَلَا تَخَافِىۡ وَلَا تَحۡزَنِىۡۚ اِنَّا رَآدُّوۡهُ اِلَيۡكِ وَجٰعِلُوۡهُ مِنَ الۡمُرۡسَلِيۡنَ﴿۷﴾
২৮-৭ : মূসা - জননীর অন্তরে আমি ইঙ্গিতে নির্দেশ করিলাম, ‘শিশুটিকে স্তন্য দান করিতে থাক। যখন তুমি তাহার সম্পর্কে কোন আশংকা করিবে তখন ইহাকে দরিয়ায় নিক্ষেপ করিও এবং ভয় করিও না, দুঃখও করিও না। আমি অবশ্যই ইহাকে তোমার নিকট ফিরাইয়া দিব এবং ইহাকে রাসূলদের একজন করিব।’
فَالۡتَقَطَهٗۤ اٰلُ فِرۡعَوۡنَ لِيَكُوۡنَ لَهُمۡ عَدُوًّا وَّحَزَنًا ؕ اِنَّ فِرۡعَوۡنَ وَهَامٰنَ وَجُنُوۡدَهُمَا كَانُوۡا خٰطِـــِٕيۡنَ﴿۸﴾
২৮-৮ : অতঃপর ফির‘আওনের লোকজন তাহাকে উঠাইয়া লইল। ইহার পরিণাম তো এই ছিল যে, সে উহাদের শত্রু ও দুঃখের কারণ হইবে। অবশ্যই ফির‘আওন, হামান ও উহাদের বাহিনী ছিল অপরাধী।
وَقَالَتِ امۡرَاَتُ فِرۡعَوۡنَ قُرَّتُ عَيۡنٍ لِّىۡ وَلَكَ ؕ لَا تَقۡتُلُوۡهُ ۖ عَسٰٓى اَنۡ يَّـنۡفَعَنَاۤ اَوۡ نَـتَّخِذَهٗ وَلَدًا وَّهُمۡ لَا يَشۡعُرُوۡنَ﴿۹﴾
২৮-৯ : ফির‘আওনের স্ত্রী বলিল, ‘এই শিশু আমার ও তোমার নয়ন - প্রীতিকর। ইহাকে হত্যা করিও না, সে আমাদের উপকারে আসিতে পারে, আমরা তাহাকে সন্তান হিসাবেও গ্রহণ করিতে পারি।’ প্রকৃতপক্ষে উহারা ইহার পরিণাম বুঝিতে পারে নাই।
وَاَصۡبَحَ فُؤَادُ اُمِّ مُوۡسٰى فٰرِغًا ؕ اِنۡ كَادَتۡ لَـتُبۡدِىۡ بِهٖ لَوۡلَاۤ اَنۡ رَّبَطۡنَا عَلٰى قَلۡبِهَا لِتَكُوۡنَ مِنَ الۡمُؤۡمِنِيۡنَ﴿۱۰﴾
২৮-১০ : মূসা - জননীর হৃদয় অস্থির হইয়া পড়িয়াছিল। যাহাতে সে আস্থাশীল হয় তজ্জন্য আমি তাহার হৃদয়কে দৃঢ় করিয়া না দিলে সে তাহার পরিচয় তো প্রকাশ করিয়াই দিত।
وَقَالَتۡ لِاُخۡتِهٖ قُصِّيۡهِ فَبَصُرَتۡ بِهٖ عَنۡ جُنُبٍ وَّهُمۡ لَا يَشۡعُرُوۡنَۙ﴿۱۱﴾
২৮-১১ : সে মূসার ভগ্নিকে বলিল, ‘ইহার পিছনে পিছনে যাও।’ সে উহাদের অজ্ঞাতসারে দূর হইতে তাহাকে দেখিতেছিল।
وَحَرَّمۡنَا عَلَيۡهِ الۡمَرَاضِعَ مِنۡ قَبۡلُ فَقَالَتۡ هَلۡ اَدُلُّـكُمۡ عَلٰٓى اَهۡلِ بَيۡتٍ يَّكۡفُلُوۡنَهٗ لَـكُمۡ وَهُمۡ لَهٗ نٰصِحُوۡنَ﴿۱۲﴾
২৮-১২ : পূর্ব হইতেই আমি ধাত্রী - স্তন্যপানে তাহাকে বিরত রাখিয়াছিলাম। মূসার ভগ্নি বলিল, ‘তোমাদেরকে কি আমি এমন এক পরিবারের সন্ধান দিব যাহারা তোমাদের হইয়া ইহাকে লালন - পালন করিবে এবং ইহার মঙ্গলকামী হইবে?’
فَرَدَدۡنٰهُ اِلٰٓى اُمِّهٖ كَىۡ تَقَرَّ عَيۡنُهَا وَلَا تَحۡزَنَ وَلِتَعۡلَمَ اَنَّ وَعۡدَ اللّٰهِ حَقٌّ وَّلٰـكِنَّ اَكۡثَرَهُمۡ لَا يَعۡلَمُوۡنَ﴿۱۳﴾
২৮-১৩ : অতঃপর আমি তাহাকে ফিরাইয়া দিলাম তাহার জননীর নিকট যাহাতে তাহার চক্ষু জুড়ায়, সে দুঃখ না করে এবং বুঝিতে পারে যে, আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি সত্য; কিন্তু অধিকাংশ মানুষই ইহা জানে না।
وَلَمَّا بَلَغَ اَشُدَّهٗ وَاسۡتَوٰٓى اٰتَيۡنٰهُ حُكۡمًا وَّعِلۡمًا ؕ وَكَذٰلِكَ نَجۡزِى الۡمُحۡسِنِيۡنَ﴿۱۴﴾
২৮-১৪ : যখন মূসা পূর্ণ যৌবনে উপনীত ও পরিণত বয়স্ক হইল তখন আমি তাহাকে হিক্মত ও জ্ঞান দান করিলাম; এইভাবে আমি সৎকর্মপরায়ণদেরকে পুরস্কার প্রদান করিয়া থাকি।
وَدَخَلَ الۡمَدِيۡنَةَ عَلٰى حِيۡنِ غَفۡلَةٍ مِّنۡ اَهۡلِهَا فَوَجَدَ فِيۡهَا رَجُلَيۡنِ يَقۡتَتِلٰنِ هٰذَا مِنۡ شِيۡعَتِهٖ وَهٰذَا مِنۡ عَدُوِّهٖۚ فَاسۡتَغَاثَهُ الَّذِىۡ مِنۡ شِيۡعَتِهٖ عَلَى الَّذِىۡ مِنۡ عَدُوِّهٖۙ فَوَكَزَهٗ مُوۡسٰى فَقَضٰى عَلَيۡهِ قَالَ هٰذَا مِنۡ عَمَلِ الشَّيۡطٰنِ ؕ اِنَّهٗ عَدُوٌّ مُّضِلٌّ مُّبِيۡنٌ﴿۱۵﴾
২৮-১৫ : সে নগরীতে প্রবেশ করিল, যখন ইহার অধিবাসীরা ছিল অসতর্ক। সেখানে সে দুইটি লোককে সংঘর্ষে লিপ্ত দেখিল, একজন তাহার নিজ দলের এবং অপর জন তাহার শত্রুদলের। মূসার দলের লোকটি উহার শত্রুর বিরুদ্ধে তাহার সাহায্য প্রার্থনা করিল, তখন মূসা উহাকে ঘুষি মারিল; এইভাবে সে তাহাকে হত্যা করিয়া বসিল। মূসা বলিল, ‘ইহা শয়তানের কাণ্ড। সে তো প্রকাশ্য শত্রু ও বিভ্রান্তকারী।’
قَالَ رَبِّ اِنِّىۡ ظَلَمۡتُ نَفۡسِىۡ فَاغۡفِرۡ لِىۡ فَغَفَرَ لَهٗؕ اِنَّهٗ هُوَ الۡغَفُوۡرُ الرَّحِيۡمُ﴿۱۶﴾
২৮-১৬ : সে বলিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আমার নিজের প্রতি জুলুম করিয়াছি; সুতরাং আমাকে ক্ষমা কর।’ অতঃপর তিনি তাহাকে ক্ষমা করিলেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
قَالَ رَبِّ بِمَاۤ اَنۡعَمۡتَ عَلَىَّ فَلَنۡ اَكُوۡنَ ظَهِيۡرًا لِّلۡمُجۡرِمِيۡنَ﴿۱۷﴾
২৮-১৭ : সে আরও বলিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি যেহেতু আমার প্রতি অনুগ্রহ করিয়াছ, আমি কখনও অপরাধীদের সাহায্যকারী হইব না।’
فَاَصۡبَحَ فِى الۡمَدِيۡنَةِ خَآٮِٕفًا يَّتَرَقَّبُ فَاِذَا الَّذِى اسۡتَـنۡصَرَهٗ بِالۡاَمۡسِ يَسۡتَصۡرِخُهٗ ؕ قَالَ لَهٗ مُوۡسٰٓى اِنَّكَ لَـغَوِىٌّ مُّبِيۡنٌ﴿۱۸﴾
২৮-১৮ : অতঃপর ভীত সতর্ক অবস্থায় সেই নগরীতে তাহার প্রভাত হইল। হঠাৎ সে শুনিতে পাইল পূর্বদিন যে ব্যক্তি তাহার সাহায্য চাহিয়াছিল, সে তাহার সাহায্যের জন্য চিৎকার করিতেছে। মূসা তাহাকে বলিল, ‘তুমি তো স্পষ্টই একজন বিভ্রান্ত ব্যক্তি।’
فَلَمَّاۤ اَنۡ اَرَادَ اَنۡ يَّبۡطِشَ بِالَّذِىۡ هُوَ عَدُوٌّ لَّهُمَا ۙ قَالَ يٰمُوۡسٰٓى اَ تُرِيۡدُ اَنۡ تَقۡتُلَنِىۡ كَمَا قَتَلۡتَ نَفۡسًۢا بِالۡاَمۡسِ ۖ اِنۡ تُرِيۡدُ اِلَّاۤ اَنۡ تَكُوۡنَ جَبَّارًا فِى الۡاَرۡضِ وَمَا تُرِيۡدُ اَنۡ تَكُوۡنَ مِنَ الۡمُصۡلِحِيۡنَ﴿۱۹﴾
২৮-১৯ : অতঃপর মূসা যখন উভয়ের শত্রুকে ধরিতে উদ্যত হইল, তখন সে ব্যক্তি বলিয়া উঠিল, ‘হে মূসা! গতকাল তুমি যেমন এক ব্যক্তিকে হত্যা করিয়াছ, সেভাবে আমাকেও কি হত্যা করিতে চাহিতেছ? তুমি তো পৃথিবীতে স্বেচ্ছাচারী হইতে চাহিতেছ, শান্তি স্থাপনকারী হইতে চাও না।’
وَجَآءَ رَجُلٌ مِّنۡ اَقۡصَا الۡمَدِيۡنَةِ يَسۡعٰى قَالَ يٰمُوۡسٰٓى اِنَّ الۡمَلَاَ يَاۡتَمِرُوۡنَ بِكَ لِيَـقۡتُلُوۡكَ فَاخۡرُجۡ اِنِّىۡ لَـكَ مِنَ النّٰصِحِيۡنَ﴿۲۰﴾
২৮-২০ : নগরীর দূর প্রান্ত হইতে এক ব্যক্তি ছুটিয়া আসিল ও বলিল, ‘হে মূসা! পারিষদবর্গ তোমাকে হত্যা করিবার পরামর্শ করিতেছে। সুতরাং তুমি বাহিরে চলিয়া যাও, আমি তো তোমার মঙ্গলকামী।’
فَخَرَجَ مِنۡهَا خَآٮِٕفًا يَّتَرَقَّبُ قَالَ رَبِّ نَجِّنِىۡ مِنَ الۡقَوۡمِ الظّٰلِمِيۡنَ﴿۲۱﴾
২৮-২১ : ভীত সতর্ক অবস্থায় সে সেখান হইতে বাহির হইয়া পড়িল এবং বলিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি জালিম সম্প্রদায় হইতে আমাকে রক্ষা কর।’
وَلَـمَّا تَوَجَّهَ تِلۡقَآءَ مَدۡيَنَ قَالَ عَسٰى رَبِّىۡۤ اَنۡ يَّهۡدِيَنِىۡ سَوَآءَ السَّبِيۡلِ﴿۲۲﴾
২৮-২২ : যখন মূসা মাদইয়ান অভিমুখে যাত্রা করিল তখন বলিল, ‘আশা করি আমার প্রতিপালক আমাকে সরল পথ প্রদর্শন করিবেন।’
وَلَـمَّا وَرَدَ مَآءَ مَدۡيَنَ وَجَدَ عَلَيۡهِ اُمَّةً مِّنَ النَّاسِ يَسۡقُوۡنَ وَوَجَدَ مِنۡ دُوۡنِهِمُ امۡرَاَتَيۡنِ تَذُوۡدٰنِ ۚ قَالَ مَا خَطۡبُكُمَا ؕ قَالَـتَا لَا نَسۡقِىۡ حَتّٰى يُصۡدِرَ الرِّعَآءُ وَاَبُوۡنَا شَيۡخٌ كَبِيۡرٌ ﴿۲۳﴾
২৮-২৩ : যখন সে মাদইয়ানের কূপের নিকট পৌঁছিল, দেখিল, একদল লোক তাহাদের জানোয়ারগুলিকে পানি পান করাইতেছে এবং উহাদের পশ্চাতে দুইজন নারী তাহাদের পশুগুলিকে আগলাইতেছে। মূসা বলিল, ‘তোমাদের কী ব্যাপার?’ উহারা বলিল, ‘আমরা আমাদের জানোয়ারগুলিকে পানি পান করাইতে পারি না, যতক্ষণ রাখালেরা উহাদের জানোয়ারগুলিকে লইয়া সরিয়া না যায়। আমাদের পিতা অতি বৃদ্ধ।’
فَسَقٰى لَهُمَا ثُمَّ تَوَلّٰٓى اِلَى الظِّلِّ فَقَالَ رَبِّ اِنِّىۡ لِمَاۤ اَنۡزَلۡتَ اِلَىَّ مِنۡ خَيۡرٍ فَقِيۡرٌ﴿۲۴﴾
২৮-২৪ : মূসা তখন উহাদের পক্ষে জানোয়ারগুলিকে পানি পান করাইল। তৎপর সে ছায়ার নিচে আশ্রয় গ্রহণ করিয়া বলিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করিবে আমি তো তাহার কাঙ্গাল।’
فَجَآءَتۡهُ اِحۡدٰٮہُمَا تَمۡشِىۡ عَلَى اسۡتِحۡيَآءٍ قَالَتۡ اِنَّ اَبِىۡ يَدۡعُوۡكَ لِيَجۡزِيَكَ اَجۡرَ مَا سَقَيۡتَ لَـنَا ؕ فَلَمَّا جَآءَهٗ وَقَصَّ عَلَيۡهِ الۡقَصَصَ ۙ قَالَ لَا تَخَفۡ نَجَوۡتَ مِنَ الۡقَوۡمِ الظّٰلِمِيۡنَ﴿۲۵﴾
২৮-২৫ : তখন নারীদ্বয়ের একজন শরম - জড়িত চরণে তাহার নিকট আসিল এবং বলিল, ‘আমার পিতা আপনাকে আমন্ত্রণ করিতেছেন, আমাদের জানোয়ারগুলিকে পানি পান করাইবার পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য।’ অতঃপর মূসা তাহার নিকট আসিয়া সমস্ত বৃত্তান্ত বর্ণনা করিলে সে বলিল, ‘ভয় করিও না, তুমি জালিম সম্প্রদায়ের কবল হইতে বাঁচিয়া গিয়াছ।’
قَالَتۡ اِحۡدٰٮہُمَا يٰۤاَبَتِ اسْتَاْجِرۡهُ اِنَّ خَيۡرَ مَنِ اسۡتَـاْجَرۡتَ الۡقَوِىُّ الۡاَمِيۡنُ﴿۲۶﴾
২৮-২৬ : উহাদের একজন বলিল, ‘হে পিতা! তুমি ইহাকে মজুর নিযুক্ত কর, কারণ তোমার মজুর হিসাবে উত্তম হইবে সেই ব্যক্তি, যে শক্তিশালী, বিশ্বস্ত।’
قَالَ اِنِّىۡۤ اُرِيۡدُ اَنۡ اُنۡكِحَكَ اِحۡدَى ابۡنَتَىَّ هٰتَيۡنِ عَلٰٓى اَنۡ تَاۡجُرَنِىۡ ثَمٰنِىَ حِجَجٍۚ فَاِنۡ اَتۡمَمۡتَ عَشۡرًا فَمِنۡ عِنۡدِكَۚ وَمَاۤ اُرِيۡدُ اَنۡ اَشُقَّ عَلَيۡكَؕ سَتَجِدُنِىۡۤ اِنۡ شَآءَ اللّٰهُ مِنَ الصّٰلِحِيۡنَ﴿۲۷﴾
২৮-২৭ : সে মূসাকে বলিল, ‘আমি আমার এই কন্যাদ্বয়ের একজনকে তোমার সঙ্গে বিবাহ দিতে চাই, এই শর্তে যে, তুমি আট বৎসর আমার কাজ করিবে, যদি তুমি দশ বৎসর পূর্ণ কর, সে তোমার ইচ্ছা। আমি তােমাকে কষ্ট দিতে চাই না। আল্লাহ্ ইচ্ছা করিলে তুমি আমাকে সদাচারী পাইবে।’
قَالَ ذٰ لِكَ بَيۡنِىۡ وَبَيۡنَكَ ؕ اَيَّمَا الۡاَجَلَيۡنِ قَضَيۡتُ فَلَا عُدۡوَانَ عَلَـىَّ ؕ وَاللّٰهُ عَلٰى مَا نَقُوۡلُ وَكِيۡلٌ﴿۲۸﴾
২৮-২৮ : মূসা বলিল, ‘আমার ও আপনার মধ্যে এই চুক্তিই রহিল। এই দুইটি মেয়াদের কোন একটি আমি পূর্ণ করিলে আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকিবে না। আমরা যে বিষয়ে কথা বলিতেছি আল্লাহ্ তাহার সাক্ষী।’
فَلَمَّا قَضٰى مُوۡسَى الۡاَجَلَ وَسَارَ بِاَهۡلِهٖۤ اٰنَسَ مِنۡ جَانِبِ الطُّوۡرِ نَارًاۚ قَالَ لِاَهۡلِهِ امۡكُثُوۡۤا اِنِّىۡۤ اٰنَسۡتُ نَارًا لَّعَلِّىۡۤ اٰتِيۡكُمۡ مِّنۡهَا بِخَبَرٍ اَوۡ جَذۡوَةٍ مِّنَ النَّارِ لَعَلَّكُمۡ تَصۡطَلُوۡنَ﴿۲۹﴾
২৮-২৯ : মূসা যখন তাহার মেয়াদ পূর্ণ করিবার পর সপরিবারে যাত্রা করিল, তখন সে আত্ তূর পর্বতের দিকে আগুন দেখিতে পাইল। সে তাহার পরিজনবর্গকে বলিল, ‘তোমরা অপেক্ষা কর, আমি আগুন দেখিয়াছি, সম্ভবত আমি সেখান হইতে তোমাদের জন্য খবর আনিতে পারি অথবা একখণ্ড জ্বলন্ত কাঠ আনিতে পারি যাহাতে তোমরা আগুন পোহাইতে পার।’
فَلَمَّاۤ اَتٰٮهَا نُوۡدِىَ مِنۡ شَاطِیٴِ الۡوَادِ الۡاَيۡمَنِ فِى الۡبُقۡعَةِ الۡمُبٰرَكَةِ مِنَ الشَّجَرَةِ اَنۡ يّٰمُوۡسٰٓى اِنِّىۡۤ اَنَا اللّٰهُ رَبُّ الۡعٰلَمِيۡنَ ۙ﴿۳۰﴾
২৮-৩০ : যখন মূসা আগুনের নিকট পৌঁছিল তখন উপত্যকার দক্ষিণ পার্শ্বে পবিত্র ভূমিস্থিত এক বৃক্ষের দিক হইতে তাহাকে আহ্বান করিয়া বলা হইল, ‘হে মূসা ! আমিই আল্লাহ্, জগতসমূহের প্রতিপালক;’
وَاَنۡ اَ لۡقِ عَصَاكَ ؕ فَلَمَّا رَاٰهَا تَهۡتَزُّ كَاَنَّهَا جَآنٌّ وَّلّٰى مُدۡبِرًا وَّلَمۡ يُعَقِّبۡ ؕ يٰمُوۡسٰٓى اَ قۡبِلۡ وَلَا تَخَفۡ اِنَّكَ مِنَ الۡاٰمِنِيۡنَ﴿۳۱﴾
২৮-৩১ : আরও বলা হইল, ‘তুমি তোমার যষ্টি নিক্ষেপ কর।’ অতঃপর, যখন সে উহাকে সর্পের ন্যায় ছুটাছুটি করিতে দেখিল তখন পিছনের দিকে ছুটিতে লাগিল এবং ফিরিয়া তাকাইল না। তাহাকে বলা হইল, ‘হে মূসা! সম্মুখে আইস, ভয় করিও না; তুমি তো নিরাপদ।
اُسۡلُكۡ يَدَكَ فِىۡ جَيۡبِكَ تَخۡرُجۡ بَيۡضَآءَ مِنۡ غَيۡرِ سُوۡٓءٍ وَّاضۡمُمۡ اِلَيۡكَ جَنَاحَكَ مِنَ الرَّهۡبِ فَذٰنِكَ بُرۡهَانٰنِ مِنۡ رَّبِّكَ اِلٰى فِرۡعَوۡنَ وَمَلَا۟ٮِٕهٖؕ اِنَّهُمۡ كَانُوۡا قَوۡمًا فٰسِقِيۡنَ﴿۳۲﴾
২৮-৩২ : ‘তোমার হাত তোমার বগলে রাখ, ইহা বাহির হইয়া আসিবে শুভ্র - সমুজ্জ্বল নির্দোষ হইয়া। ভয় দূর করিবার জন্য তোমার হস্তদ্বয় নিজের দিকে চাপিয়া ধর। এই দুইটি তোমার প্রতিপালক - প্রদত্ত প্রমাণ, ফির‘আওন ও তাহার পরিষদবর্গের জন্য। উহারা তো সত্যত্যাগী সম্প্রদায়।
قَالَ رَبِّ اِنِّىۡ قَتَلۡتُ مِنۡهُمۡ نَفۡسًا فَاَخَافُ اَنۡ يَّقۡتُلُوۡنِ﴿۳۳﴾
২৮-৩৩ : মূসা বলিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি তো উহাদের একজনকে হত্যা করিয়াছি। ফলে আমি আশংকা করিতেছি উহারা আমাকে হত্যা করিবে।
وَاَخِىۡ هٰرُوۡنُ هُوَ اَفۡصَحُ مِنِّىۡ لِسَانًا فَاَرۡسِلۡهُ مَعِىَ رِدۡاً يُّصَدِّقُنِىۡٓ اِنِّىۡۤ اَخَافُ اَنۡ يُّكَذِّبُوۡنِ﴿۳۴﴾
২৮-৩৪ : ‘আমার ভ্রাতা হারূন আমা অপেক্ষা বাগ্মী; অতএব তাহাকে আমার সাহায্যকারীরূপে প্রেরণ কর, সে আমাকে সমর্থন করিবে। আমি আশংকা করি উহারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলিবে।’
قَالَ سَنَشُدُّ عَضُدَكَ بِاَخِيۡكَ وَنَجۡعَلُ لَـكُمَا سُلۡطٰنًا فَلَا يَصِلُوۡنَ اِلَيۡكُمَا ۛ ۚ بِاٰيٰتِنَاۤ ۛ ۚ اَنۡـتُمَا وَمَنِ اتَّبَعَكُمَا الۡغٰلِبُوۡنَ﴿۳۵﴾
২৮-৩৫ : আল্লাহ্ বলিলেন, ‘আমি তোমার ভ্রাতার দ্বারা তোমার বাহু শক্তিশালী করিব এবং তোমাদের উভয়কে প্রাধান্য দান করিব। উহারা তোমাদের নিকট পৌঁছিতে পারিবে না। তোমরা এবং তোমাদের অনুসারীরা আমার নিদর্শনবলে উহাদের উপর প্রবল হইবে।’
فَلَمَّا جَآءَهُمۡ مُّوۡسٰى بِاٰيٰتِنَا بَيِّنٰتٍ قَالُوۡا مَا هٰذَاۤ اِلَّا سِحۡرٌ مُّفۡتَـرًى وَمَا سَمِعۡنَا بِهٰذَا فِىۡۤ اٰبَآٮِٕنَا الۡاَوَّلِيۡنَ﴿۳۶﴾
২৮-৩৬ : মূসা যখন উহাদের নিকট আমার সুস্পষ্ট নিদর্শনগুলি লইয়া আসিল, উহারা বলিল, ‘ইহা তো অলীক ইন্দ্রজাল মাত্র। আমাদের পূর্বপুরুষগণের কালে কখনও এইরূপ কথা শুনি নাই।’
وَقَالَ مُوۡسٰى رَبِّىۡۤ اَعۡلَمُ بِمَنۡ جَآءَ بِالۡهُدٰى مِنۡ عِنۡدِهٖ وَمَنۡ تَكُوۡنُ لَهٗ عَاقِبَةُ الدَّارِؕ اِنَّهٗ لَا يُفۡلِحُ الظّٰلِمُوۡنَ﴿۳۷﴾
২৮-৩৭ : মূসা বলিল, ‘আমার প্রতিপালক সম্যক অবগত, কে তাঁহার নিকট হইতে পথনির্দেশ আনিয়াছে এবং আখিরাতে কাহার পরিণাম শুভ হইবে। জালিমরা কখনো সফলকাম হইবে না।’
وَقَالَ فِرۡعَوۡنُ يٰۤـاَيُّهَا الۡمَلَاُ مَا عَلِمۡتُ لَـكُمۡ مِّنۡ اِلٰهٍ غَيۡرِىۡ ۚ فَاَوۡقِدۡ لِىۡ يٰهَامٰنُ عَلَى الطِّيۡنِ فَاجۡعَلْ لِّىۡ صَرۡحًا لَّعَلِّىۡۤ اَطَّلِعُ اِلٰٓى اِلٰهِ مُوۡسٰى ۙ وَاِنِّىۡ لَاَظُنُّهٗ مِنَ الۡـكٰذِبِيۡنَ ﴿۳۸﴾
২৮-৩৮ : ফির‘আওন বলিল, ‘হে পারিষদবর্গ! আমি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্ আছে বলিয়া জানি না। হে হামান! তুমি আমার জন্য ইট পোড়াও এবং একটি সুউচ্চ প্রাসোয়াদ তৈয়ার কর; হয়ত আমি ইহাতে উঠিয়া মূসার ইলাহ্কে দেখিতে পারি। তবে আমি অবশ্যই মনে করি সে মিথ্যাবাদী।’
وَاسۡتَكۡبَرَ هُوَ وَجُنُوۡدُهٗ فِى الۡاَرۡضِ بِغَيۡرِ الۡحَـقِّ وَظَنُّوۡۤا اَنَّهُمۡ اِلَـيۡنَا لَا يُرۡجَعُوۡنَ﴿۳۹﴾
২৮-৩৯ : ফির‘আওন ও তাহার বাহিনী অন্যায়ভাবে পৃথিবীতে অহংকার করিয়াছিল এবং উহারা মনে করিয়াছিল যে, উহারা আমার নিকট প্রত্যাবর্তিত হইবে না।
فَاَخَذۡنٰهُ وَجُنُوۡدَهٗ فَنَبَذۡنٰهُمۡ فِى الۡيَمِّۚ فَانْظُرۡ كَيۡفَ كَانَ عَاقِبَةُ الظّٰلِمِيۡنَ ﴿۴۰﴾
২৮-৪০ : অতএব আমি তাহাকে ও তাহার বাহিনীকে ধরিলাম এবং তাহাদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করিলাম। দেখ, জালিমদের পরিণাম কি হইয়া থাকে।
وَجَعَلۡنٰهُمۡ اَٮِٕمَّةً يَّدۡعُوۡنَ اِلَى النَّارِۚ وَيَوۡمَ الۡقِيٰمَةِ لَا يُنۡصَرُوۡنَ﴿۴۱﴾
২৮-৪১ : উহাদেরকে আমি নেতা করিয়াছিলাম; উহারা লোকদেরকে জাহান্নামের দিকে আহ্বান করিত; কিয়ামতের দিন উহাদেরকে সাহায্য করা হইবে না।
وَاَتۡبَعۡنٰهُمۡ فِىۡ هٰذِهِ الدُّنۡيَا لَـعۡنَةً ۚ وَيَوۡمَ الۡقِيٰمَةِ هُمۡ مِّنَ الۡمَقۡبُوۡحِيۡنَ﴿۴۲﴾
২৮-৪২ : এই পৃথিবীতে আমি উহাদের পশ্চাতে লাগাইয়া দিয়াছি অভিসম্পাত এবং কিয়ামতের দিন উহারা হইবে ঘৃণিত।
وَلَقَدۡ اٰتَيۡنَا مُوۡسَى الۡكِتٰبَ مِنۡۢ بَعۡدِ مَاۤ اَهۡلَكۡنَا الۡقُرُوۡنَ الۡاُوۡلٰى بَصَآٮِٕرَ لِلنَّاسِ وَهُدًى وَّرَحۡمَةً لَّعَلَّهُمۡ يَتَذَكَّرُوۡنَ﴿۴۳﴾
২৮-৪৩ : আমি তো পূর্ববর্তী বহু মানবগোষ্ঠীকে বিনাশ করিবার পর মূসাকে দিয়াছিলাম কিতাব, মানবজাতির জন্য জ্ঞানবর্তিকা, পথনির্দেশ ও অনুগ্রহস্বরূপ, যাহাতে উহারা উপদেশ গ্রহণ করে।
وَمَا كُنۡتَ بِجَانِبِ الۡغَرۡبِىِّ اِذۡ قَضَيۡنَاۤ اِلٰى مُوۡسَى الۡاَمۡرَ وَمَا كُنۡتَ مِنَ الشّٰهِدِيۡنَۙ﴿۴۴﴾
২৮-৪৪ : মূসাকে যখন আমি বিধান দিয়াছিলাম তখন তুমি পশ্চিম প্রান্তে উপস্থিত ছিলে না এবং তুমি প্রত্যক্ষদর্শীও ছিলে না।
وَلٰـكِنَّاۤ اَنۡشَاۡنَا قُرُوۡنًا فَتَطَاوَلَ عَلَيۡهِمُ الۡعُمُرُۚ وَمَا كُنۡتَ ثَاوِيًا فِىۡۤ اَهۡلِ مَدۡيَنَ تَـتۡلُوۡا عَلَيۡهِمۡ اٰيٰتِنَاۙ وَلٰـكِنَّا كُنَّا مُرۡسِلِيۡنَ﴿۴۵﴾
২৮-৪৫ : বস্তুত আমি অনেক মানবগোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটাইয়াছিলাম ; অতঃপর উহাদের বহু যুগ অতিবাহিত হইয়া গিয়াছে। তুমি তো মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে বিদ্যমান ছিলে না উহাদের নিকট আমার আয়াত আবৃত্তি করিবার জন্য। আমিই তো ছিলাম রাসূল প্রেরণকারী।
وَمَا كُنۡتَ بِجَانِبِ الطُّوۡرِ اِذۡ نَادَيۡنَا وَلٰـكِنۡ رَّحۡمَةً مِّنۡ رَّبِّكَ لِتُنۡذِرَ قَوۡمًا مَّاۤ اَتٰٮهُمۡ مِّنۡ نَّذِيۡرٍ مِّنۡ قَبۡلِكَ لَعَلَّهُمۡ يَتَذَكَّرُوۡنَ﴿۴۶﴾
২৮-৪৬ : মূসাকে যখন আমি আহ্বান করিয়াছিলাম তখন তুমি আত্ তূর পর্বতপার্শ্বে উপস্থিত ছিলে না। বস্তুত ইহা তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে দয়াস্বরূপ, যাহাতে তুমি এমন এক সম্প্রদায়কে সতর্ক করিতে পার, যাহাদের নিকট তোমার পূর্বে কোন সতর্ককারী আসে নাই, যেন উহারা উপদেশ গ্রহণ করে ;
وَلَوۡلَاۤ اَنۡ تُصِيۡبَـهُمۡ مُّصِيۡبَةٌۢ بِمَا قَدَّمَتۡ اَيۡدِيۡهِمۡ فَيَقُوۡلُوۡا رَبَّنَا لَوۡلَاۤ اَرۡسَلۡتَ اِلَـيۡنَا رَسُوۡلًا فَنَـتَّبِعَ اٰيٰتِكَ وَنَـكُوۡنَ مِنَ الۡمُؤۡمِنِيۡنَ﴿۴۷﴾
২৮-৪৭ : রাসূল না পাঠাইলে উহাদের কৃতকর্মের জন্য উহাদের কোন বিপদ হইলে উহারা বলিত, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের নিকট কোন রাসূল প্রেরণ করিলে না কেন? করিলে আমরা তোমার বিধান মানিয়া চলিতাম এবং আমরা হইতাম মু’মিন।’
فَلَمَّا جَآءَهُمُ الۡحَـقُّ مِنۡ عِنۡدِنَا قَالُوۡا لَوۡلَاۤ اُوۡتِىَ مِثۡلَ مَاۤ اُوۡتِىَ مُوۡسٰى ؕ اَوَلَمۡ يَكۡفُرُوۡا بِمَاۤ اُوۡتِىَ مُوۡسٰى مِنۡ قَبۡلُ ۚ قَالُوۡا سِحۡرٰنِ تَظَاهَرَا وَقَالُوۡۤا اِنَّا بِكُلٍّ كٰفِرُوۡنَ﴿۴۸﴾
২৮-৪৮ : অতঃপর যখন আমার নিকট হইতে উহাদের নিকট সত্য আসিল, উহারা বলিতে লাগিল, ‘মূসাকে যেরূপ দেওয়া হইয়াছিল, তাহাকে সেরূপ দেওয়া হইল না কেন?’ কিন্তু পূর্বে মূসাকে যাহা দেওয়া হইয়াছিল তাহা কি উহারা অস্বীকার করে নাই? উহারা বলিয়াছিল, ‘দুইটিই জাদু, একে অপরকে সমর্থন করে।’ এবং উহারা বলিয়াছিল, ‘আমরা সকলকেই প্রত্যাখ্যান করি।’
قُلۡ فَاۡتُوۡا بِكِتٰبٍ مِّنۡ عِنۡدِ اللّٰهِ هُوَ اَهۡدٰى مِنۡهُمَاۤ اَتَّبِعۡهُ اِنۡ كُنۡتُمۡ صٰدِقِيۡنَ﴿۴۹﴾
২৮-৪৯ : বল, ‘তোমরা সত্যবাদী হইলে আল্লাহ্র নিকট হইতে এক কিতাব আনয়ন কর, যাহা পথনির্দেশে এতদুভয় হইতে উৎকৃষ্টতর হইবে; আমি সে কিতাব অনুসরণ করিব।’
فَاِنۡ لَّمۡ يَسۡتَجِيۡبُوۡا لَكَ فَاعۡلَمۡ اَنَّمَا يَـتَّبِعُوۡنَ اَهۡوَآءَهُمۡ ؕ وَمَنۡ اَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ هَوٰٮهُ بِغَيۡرِ هُدًى مِّنَ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا يَهۡدِى الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِيۡنَ﴿۵۰﴾
২৮-৫০ : অতঃপর উহারা যদি তোমার আহ্বানে সাড়া না দেয়, তাহা হইলে জানিবে উহারা তো কেবল নিজেদের খেয়াল - খুশির অনুসরণ করে। আল্লাহ্র পথনির্দেশ অগ্রাহ্য করিয়া যে ব্যক্তি নিজ খেয়াল - খুশির অনুসরণ করে তাহা অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত আর কে? আল্লাহ্ জালিম সম্প্রদায়কে পথনির্দেশ করেন না।
وَلَقَدۡ وَصَّلۡنَا لَهُمُ الۡقَوۡلَ لَعَلَّهُمۡ يَتَذَكَّرُوۡنَؕ﴿۵۱﴾
২৮-৫১ : আমি তো উহাদের নিকট পরপর বাণী পৌঁছাইয়া দিয়াছি; যাহাতে উহারা উপদেশ গ্রহণ করে।
اَلَّذِيۡنَ اٰتَيۡنٰهُمُ الۡـكِتٰبَ مِنۡ قَبۡلِهٖ هُمۡ بِهٖ يُؤۡمِنُوۡنَ﴿۵۲﴾
২৮-৫২ : ইহার পূর্বে আমি যাহাদেরকে কিতাব দিয়াছিলাম, তাহারা ইহাতে বিশ্বাস করে।
وَاِذَا يُتۡلٰى عَلَيۡهِمۡ قَالُوۡۤا اٰمَنَّا بِهٖۤ اِنَّهُ الۡحَـقُّ مِنۡ رَّبِّنَاۤ اِنَّا كُنَّا مِنۡ قَبۡلِهٖ مُسۡلِمِيۡنَ﴿۵۳﴾
২৮-৫৩ : যখন উহাদের নিকট ইহা আবৃত্তি করা হয় তখন উহারা বলে, ‘আমরা ইহাতে ঈমান আনি, নিশ্চয়ই ইহা আমাদের প্রতিপালক হইতে আগত সত্য। আমরা তো পূর্বেও আত্মসর্মপণকারী ছিলাম;
اُولٰٓٮِٕكَ يُؤۡتَوۡنَ اَجۡرَهُمۡ مَّرَّتَيۡنِ بِمَا صَبَرُوۡا وَيَدۡرَءُوۡنَ بِالۡحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ وَمِمَّا رَزَقۡنٰهُمۡ يُنۡفِقُوۡنَ﴿۵۴﴾
২৮-৫৪ : উহাদেরকে দুইবার পারিশ্রমিক প্রদান করা হইবে, যেহেতু উহারা ধৈর্যশীল এবং উহারা ভালর দ্বারা মন্দের মুকাবিলা করে ও আমি উহাদেরকে যে রিযিক দিয়াছি তাহা হইতে উহারা ব্যয় করে।
وَاِذَا سَمِعُوا اللَّغۡوَ اَعۡرَضُوۡا عَنۡهُ وَقَالُوۡا لَنَاۤ اَعۡمَالُنَا وَلَـكُمۡ اَعۡمَالُـكُمۡ سَلٰمٌ عَلَيۡكُمۡ لَا نَبۡتَغِى الۡجٰهِلِيۡنَ﴿۵۵﴾
২৮-৫৫ : উহারা যখন অসার বাক্য শ্রবণ করে তখন উহারা তাহা উপেক্ষা করিয়া চলে এবং বলে, ‘আমাদের কাজের ফল আমাদের জন্য এবং তোমাদের কাজের ফল তোমাদের জন্য ; তোমাদের প্রতি ‘সালাম’। আমরা অজ্ঞদের সঙ্গ চাহি না।’
اِنَّكَ لَا تَهۡدِىۡ مَنۡ اَحۡبَبۡتَ وَلٰـكِنَّ اللّٰهَ يَهۡدِىۡ مَنۡ يَّشَآءُؕ وَهُوَ اَعۡلَمُ بِالۡمُهۡتَدِيۡنَ﴿۵۶﴾
২৮-৫৬ : তুমি যাহাকে ভালবাস, ইচ্ছা করিলেই তাহাকে সৎপথে আনিতে পারিবে না। তবে আল্লাহ্ যাহাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেন এবং তিনিই ভাল জানেন সৎপথ অনুসারীদেরকে।
وَقَالُوۡۤا اِنۡ نَّـتَّبِعِ الۡهُدٰى مَعَكَ نُـتَخَطَّفۡ مِنۡ اَرۡضِنَا ؕ اَوَلَمۡ نُمَكِّنۡ لَّهُمۡ حَرَمًا اٰمِنًا يُّجۡبٰٓى اِلَيۡهِ ثَمَرٰتُ كُلِّ شَىۡءٍ رِّزۡقًا مِّنۡ لَّدُنَّا وَلٰـكِنَّ اَكۡثَرَهُمۡ لَا يَعۡلَمُوۡنَ﴿۵۷﴾
২৮-৫৭ : উহারা বলে, ‘আমরা যদি তোমার সঙ্গে সৎপথ অনুসরণ করি তবে আমাদেরকে দেশ হইতে উৎখাত করা হইবে।’ আমি কি উহাদেরকে এক নিরাপদ হারামে প্রতিষ্ঠিত করি নাই, যেখানে সর্বপ্রকার ফলমূল আমদানী হয় আমার দেওয়া রিযিক স্বরূপ? কিন্তু উহাদের অধিকাংশই ইহা জানে না।
وَكَمۡ اَهۡلَـكۡنَا مِنۡ قَرۡيَةٍۢ بَطِرَتۡ مَعِيۡشَتَهَا ۚ فَتِلۡكَ مَسٰكِنُهُمۡ لَمۡ تُسۡكَنۡ مِّنۡۢ بَعۡدِهِمۡ اِلَّا قَلِيۡلًا ؕ وَكُنَّا نَحۡنُ الۡوٰرِثِيۡنَ﴿۵۸﴾
২৮-৫৮ : কত জনপদকে আমি ধ্বংস করিয়াছি যাহার বাসিন্দারা নিজেদের ভোগ - সম্পদের দম্ভ করিত! এইগুলিই তো উহাদের ঘরবাড়ি ; উহাদের পর এইগুলিতে লোকজন সামান্যই বসবাস করিয়াছে। আর আমি তো চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী !
وَ مَا كَانَ رَبُّكَ مُهۡلِكَ الۡقُرٰى حَتّٰى يَبۡعَثَ فِىۡۤ اُمِّهَا رَسُوۡلًا يَّتۡلُوۡا عَلَيۡهِمۡ اٰيٰتِنَا ۚ وَمَا كُنَّا مُهۡلِكِى الۡقُرٰٓى اِلَّا وَاَهۡلُهَا ظٰلِمُوۡنَ﴿۵۹﴾
২৮-৫৯ : তোমার প্রতিপালক জনপদসমূহকে ধ্বংস করেন না উহার কেন্দ্রে তাঁহার আয়াত আবৃত্তি করিবার জন্য রাসূল প্রেরণ না করিয়া এবং আমি জনপদসমূহকে তখনই ধ্বংস করি যখন ইহার বাসিন্দারা জুলুম করে।
وَمَاۤ اُوۡتِيۡتُمۡ مِّنۡ شَىۡءٍ فَمَتَاعُ الۡحَيٰوةِ الدُّنۡيَا وَزِيۡنَـتُهَا ۚ وَمَا عِنۡدَ اللّٰهِ خَيۡرٌ وَّاَبۡقٰى ؕ اَفَلَا تَعۡقِلُوۡنَ﴿۶۰﴾
২৮-৬০ : তোমাদেরকে যাহা কিছু দেওয়া হইয়াছে তাহা তো পার্থিব জীবনের ভোগ ও শোভা এবং যাহা আল্লাহ্র নিকট আছে তাহা উত্তম ও স্থায়ী। তোমরা কি অনুধাবন করিবে না?
اَفَمَنۡ وَّعَدۡنٰهُ وَعۡدًا حَسَنًا فَهُوَ لَاقِيۡهِ كَمَنۡ مَّتَّعۡنٰهُ مَتَاعَ الۡحَيٰوةِ الدُّنۡيَا ثُمَّ هُوَ يَوۡمَ الۡقِيٰمَةِ مِنَ الۡمُحۡضَرِيۡنَ﴿۶۱﴾
২৮-৬১ : যাহাকে আমি উত্তম পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়াছি, যাহা সে পাইবে, সে কি ঐ ব্যক্তির সমান যাহাকে আমি পার্থিব জীবনের ভোগ - সম্ভার দিয়াছি, যাহাকে পরে কিয়ামতের দিন হাযির করা হইবে?
وَيَوۡمَ يُنَادِيۡهِمۡ فَيَـقُوۡلُ اَيۡنَ شُرَكَآءِىَ الَّذِيۡنَ كُنۡتُمۡ تَزۡعُمُوۡنَ﴿۶۲﴾
২৮-৬২ : এবং সেই দিন তিনি উহাদেরকে আহ্বান করিয়া বলিবেন, ‘তোমরা যাহাদেরকে আমার শরীক গণ্য করিতে, তাহারা কোথায়?’
قَالَ الَّذِيۡنَ حَقَّ عَلَيۡهِمُ الۡقَوۡلُ رَبَّنَا هٰٓؤُلَاۤءِ الَّذِيۡنَ اَغۡوَيۡنَا ۚ اَغۡوَيۡنٰهُمۡ كَمَا غَوَيۡنَا ۚ تَبَـرَّاۡنَاۤ اِلَيۡكَ مَا كَانُوۡۤا اِيَّانَا يَعۡبُدُوۡنَ﴿۶۳﴾
২৮-৬৩ : যাহাদের জন্য শাস্তি অবধারিত হইয়াছে তাহারা বলিবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক ! ইহাদেরকেই আমরা বিভ্রান্ত করিয়াছিলাম ; ইহাদেরকে বিভ্রান্ত করিয়াছিলাম যেমন আমরা বিভ্রান্ত হইয়াছিলাম ; আপনার সমীপে আমরা দায়িত্ব হইতে অব্যাহতি চাহিতেছি। ইহারা তো আমাদের ‘ইবাদত করিত না।’
وَقِيۡلَ ادۡعُوۡا شُرَكَآءَكُمۡ فَدَعَوۡهُمۡ فَلَمۡ يَسۡتَجِيۡبُوۡا لَهُمۡ وَرَاَوُا الۡعَذَابَۚ لَوۡ اَنَّهُمۡ كَانُوۡا يَهۡتَدُوۡنَ﴿۶۴﴾
২৮-৬৪ : উহাদেরকে বলা হইবে, ‘তোমাদের দেবতাগুলিকে আহ্বান কর।’ তখন ইহারা উহাদেরকে ডাকিবে। কিন্তু উহারা ইহাদের ডাকে সাড়া দিবে না। ইহারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করিবে। হায়! ইহারা যদি সৎপথ অনুসরণ করিত।
وَيَوۡمَ يُنَادِيۡهِمۡ فَيَـقُوۡلُ مَاذَاۤ اَجَبۡتُمُ الۡمُرۡسَلِيۡنَ﴿۶۵﴾
২৮-৬৫ : আর সেই দিন আল্লাহ্ ইহাদেরকে ডাকিয়া বলিবেন, ‘তোমরা রাসূলগণকে কী জবাব দিয়াছিলে?’
فَعَمِيَتۡ عَلَيۡهِمُ الۡاَنۡۢبَآءُ يَوۡمَٮِٕذٍ فَهُمۡ لَا يَتَسَآءَلُوۡنَ﴿۶۶﴾
২৮-৬৬ : সেই দিন সকল তথ্য তাহাদের নিকট হইতে বিলুপ্ত হইবে এবং ইহারা একে অপরকে জিজ্ঞাআস্ সাবাদও করিতে পারিবে না।
فَاَمَّا مَنۡ تَابَ وَاٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًـا فَعَسٰٓى اَنۡ يَّكُوۡنَ مِنَ الۡمُفۡلِحِيۡنَ﴿۶۷﴾
২৮-৬৭ : তবে যে ব্যক্তি তওবা করিয়াছিল এবং ঈমান আনিয়াছিল ও সৎকর্ম করিয়াছিল, আশা করা যায় সে সাফল্য অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হইবে।
وَرَبُّكَ يَخۡلُقُ مَا يَشَآءُ وَيَخۡتَارُؕ مَا كَانَ لَهُمُ الۡخِيَرَةُ ؕ سُبۡحٰنَ اللّٰهِ وَتَعٰلٰى عَمَّا يُشۡرِكُوۡنَ﴿۶۸﴾
২৮-৬৮ : তোমার প্রতিপালক যাহা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং যাহাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন, ইহাতে উহাদের কােন হাত নাই। আল্লাহ্ পবিত্র, মহান এবং উহারা যাহাকে শরীক করে তাহা হইতে তিনি ঊর্ধ্বে!
وَرَبُّكَ يَعۡلَمُ مَا تُكِنُّ صُدُوۡرُهُمۡ وَمَا يُعۡلِنُوۡنَ﴿۶۹﴾
২৮-৬৯ : আর তোমার প্রতিপালক জানেন ইহাদের অন্তর যাহা গোপন করে এবং ইহারা যাহা ব্যক্ত করে।
وَهُوَ اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ لَـهُ الۡحَمۡدُ فِى الۡاُوۡلٰى وَالۡاٰخِرَةِ وَلَـهُ الۡحُكۡمُ وَاِلَيۡهِ تُرۡجَعُوۡنَ﴿۷۰﴾
২৮-৭০ : তিনিই আল্লাহ্ তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নাই, দুনিয়া ও আখিরাতে সমস্ত প্রশংসা তাঁহারই ; বিধান তাঁহারই ; তোমরা তাঁহারই দিকে প্রত্যাবর্তিত হইবে।
قُلۡ اَرَءَيۡتُمۡ اِنۡ جَعَلَ اللّٰهُ عَلَيۡكُمُ الَّيۡلَ سَرۡمَدًا اِلٰى يَوۡمِ الۡقِيٰمَةِ مَنۡ اِلٰـهٌ غَيۡرُ اللّٰهِ يَاۡتِيۡكُمۡ بِضِيَآءٍؕاَفَلَا تَسۡمَعُوۡنَ﴿۷۱﴾
২৮-৭১ : বল, ‘তোমরা ভাবিয়া দেখিয়াছ কি, আল্লাহ্ যদি রাত্রিকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, আল্লাহ্ ব্যতীত এমন কোন্ ইলাহ্ আছে, যে তোমাদেরকে আলোক আনিয়া দিতে পারে? তবুও কি তোমরা কর্ণপাত করিবে না?’
قُلۡ اَرَءَيۡتُمۡ اِنۡ جَعَلَ اللّٰهُ عَلَيۡكُمُ النَّهَارَ سَرۡمَدًا اِلٰى يَوۡمِ الۡقِيٰمَةِ مَنۡ اِلٰـهٌ غَيۡرُ اللّٰهِ يَاۡتِيۡكُمۡ بِلَيۡلٍ تَسۡكُنُوۡنَ فِيۡهِؕ اَفَلَا تُبۡصِرُوۡنَ﴿۷۲﴾
২৮-৭২ : বল, ‘তোমরা ভাবিয়া দেখিয়াছ কি, আল্লাহ্ যদি দিবসকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, আল্লাহ্ ব্যতীত এমন কোন্ ইলাহ্ আছে, যে তোমাদের জন্য রাত্রির আবির্ভাব ঘটাইবে, যাহাতে তোমরা বিশ্রাম করিতে পার? তবুও কি তোমরা ভাবিয়া দেখিবে না?’
وَمِنۡ رَّحۡمَتِهٖ جَعَلَ لَـكُمُ الَّيۡلَ وَالنَّهَارَ لِتَسۡكُنُوۡا فِيۡهِ وَلِتَبۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِهٖ وَلَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُوۡنَ﴿۷۳﴾
২৮-৭৩ : তিনিই তাঁহার দয়ায় তোমাদের জন্য করিয়াছেন রজনী ও দিবস, যেন উহাতে তোমরা বিশ্রাম করিতে পার এবং তাঁহার অনুগ্রহ সন্ধান করিতে পার এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
وَيَوۡمَ يُنَادِيۡهِمۡ فَيَـقُوۡلُ اَيۡنَ شُرَكَآءِىَ الَّذِيۡنَ كُنۡتُمۡ تَزۡعُمُوۡنَ﴿۷۴﴾
২৮-৭৪ : সেই দিন তিনি উহাদেরকে আহ্বান করিয়া বলিবেন, ‘তোমরা যাহাদেরকে আমার শরীক গণ্য করিতে তাহারা কোথায়?’
وَنَزَعۡنَا مِنۡ كُلِّ اُمَّةٍ شَهِيۡدًا فَقُلۡنَا هَاتُوۡا بُرۡهَانَكُمۡ فَعَلِمُوۡۤا اَنَّ الۡحَـقَّ لِلّٰهِ وَضَلَّ عَنۡهُمۡ مَّا كَانُوۡا يَفۡتَرُوۡنَ﴿۷۵﴾
২৮-৭৫ : প্রত্যেক সম্প্রদায় হইতে আমি একজন সাক্ষী বাহির করিয়া আনিব এবং বলিব, ‘তোমাদের প্রমাণ উপস্থিত কর।’ তখন উহারা জানিতে পারিবে, ইলাহ্ হইবার অধিকার আল্লাহ্রই এবং উহারা যাহা উদ্ভাবন করিত তাহা উহাদের নিকট হইতে অন্তর্হিত হইবে।
اِنَّ قَارُوۡنَ كَانَ مِنۡ قَوۡمِ مُوۡسٰى فَبَغٰى عَلَيۡهِمۡ وَاٰتَيۡنٰهُ مِنَ الۡكُنُوۡزِ مَاۤ اِنَّ مَفَاتِحَهٗ لَـتَـنُوۡٓاُ بِالۡعُصۡبَةِ اُولِى الۡقُوَّةِ اِذۡ قَالَ لَهٗ قَوۡمُهٗ لَا تَفۡرَحۡ اِنَّ اللّٰهَ لَا يُحِبُّ الۡفَرِحِيۡنَ ﴿۷۶﴾
২৮-৭৬ : কারূন ছিল মূসার সম্প্রদায়ভুক্ত, কিন্তু সে তাহাদের প্রতি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করিয়াছিল। আমি তাহাকে দান করিয়াছিলাম এমন ধনভাণ্ডার যাহার চাবিগুলি বহন করা একদল বলবান লোকের পক্ষেও কষ্টসাধ্য ছিল। স্মরণ কর, তাহার সম্প্রদায় তাহাকে বলিয়াছিল, ‘দম্ভ করিও না, নিশ্চয় আল্লাহ্ দাম্ভিকদেরকে পসন্দ করেন না।
وَابۡتَغِ فِيۡمَاۤ اٰتٰٮكَ اللّٰهُ الدَّارَ الۡاٰخِرَةَ وَلَا تَنۡسَ نَصِيۡبَكَ مِنَ الدُّنۡيَا وَاَحۡسِنۡ كَمَاۤ اَحۡسَنَ اللّٰهُ اِلَيۡكَ وَلَا تَبۡغِ الۡـفَسَادَ فِى الۡاَرۡضِؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا يُحِبُّ الۡمُفۡسِدِيۡنَ ﴿۷۷﴾
২৮-৭৭ : ‘আল্লাহ্ যাহা তোমাকে দিয়াছেন তদ্দ্বারা আখিরাতের আবাস অনুসন্ধান কর এবং দুনিয়া হইতে তোমার অংশ ভুলিও না; তুমি অনুগ্রহ কর যেমন আল্লাহ্ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করিয়াছেন এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করিতে চাহিও না। আল্লাহ্ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীকে ভালবাসেন না।’
قَالَ اِنَّمَاۤ اُوۡتِيۡتُهٗ عَلٰى عِلۡمٍ عِنۡدِىۡؕ اَوَلَمۡ يَعۡلَمۡ اَنَّ اللّٰهَ قَدۡ اَهۡلَكَ مِنۡ قَبۡلِهٖ مِنَ الۡقُرُوۡنِ مَنۡ هُوَ اَشَدُّ مِنۡهُ قُوَّةً وَّاَكۡثَرُ جَمۡعًاؕ وَلَا يُسۡــَٔلُ عَنۡ ذُنُوۡبِهِمُ الۡمُجۡرِمُوۡنَ﴿۷۸﴾
২৮-৭৮ : সে বলিল, ‘এই সম্পদ আমি আমার জ্ঞানবলে প্রাপ্ত হইয়াছি।’ সে কি জানিত না আল্লাহ্ তাহার পূর্বে ধ্বংস করিয়াছেন বহু মানবগোষ্ঠীকে যাহারা তাহা অপেক্ষা শক্তিতে ছিল প্রবল, জনসংখ্যায় ছিল অধিক? অপরাধীদেরকে উহাদের অপরাধ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হইবে না।
فَخَرَجَ عَلٰى قَوۡمِهٖ فِىۡ زِيۡنَتِهٖؕ قَالَ الَّذِيۡنَ يُرِيۡدُوۡنَ الۡحَيٰوةَ الدُّنۡيَا يٰلَيۡتَ لَـنَا مِثۡلَ مَاۤ اُوۡتِىَ قَارُوۡنُۙ اِنَّهٗ لَذُوۡ حَظٍّ عَظِيۡمٍ﴿۷۹﴾
২৮-৭৯ : কারূন তাহার সম্প্রদায়ের সম্মুখে উপস্থিত হইয়াছিল জাঁকজমকসহকারে। যাহারা পার্থিব জীবন কামনা করিত তাহারা বলিল, ‘আহা, কারূনকে যেইরূপ দেওয়া হইয়াছে আমাদেরকেও যদি তাহা দেওয়া হইত। প্রকৃতই সে মহাভাগ্যবান।’
وَقَالَ الَّذِيۡنَ اُوۡتُوا الۡعِلۡمَ وَيۡلَـكُمۡ ثَوَابُ اللّٰهِ خَيۡرٌ لِّمَنۡ اٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًـا ۚ وَلَا يُلَقّٰٮهَاۤ اِلَّا الصّٰبِرُوۡنَ﴿۸۰﴾
২৮-৮০ : এবং যাহাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হইয়াছিল তাহারা বলিল, ‘ধিক তোমাদেরকে! যাহারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাহাদের জন্য আল্লাহ্র পুরস্কারই শ্রেষ্ঠ এবং ধৈর্যশীল ব্যতীত ইহা কেহ পাইবে না।’
فَخَسَفۡنَا بِهٖ وَبِدَارِهِ الۡاَرۡضَ فَمَا كَانَ لَهٗ مِنۡ فِئَةٍ يَّـنۡصُرُوۡنَهٗ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ وَمَا كَانَ مِنَ الۡمُنۡتَصِرِيۡنَ﴿۸۱﴾
২৮-৮১ : অতঃপর আমি কারূনকে তাহার প্রাসোয়াদসহ ভূগর্ভে প্রোথিত করিলাম। তাহার স্বপক্ষে এমন কোন দল ছিল না যে আল্লাহ্র শাস্তি হইতে তাহাকে সাহায্য করিতে পারিত এবং সে নিজেও আত্মরক্ষায় সক্ষম ছিল না।
وَاَصۡبَحَ الَّذِيۡنَ تَمَـنَّوۡا مَكَانَهٗ بِالۡاَمۡسِ يَقُوۡلُوۡنَ وَيۡكَاَنَّ اللّٰهَ يَبۡسُطُ الرِّزۡقَ لِمَنۡ يَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِهٖ وَيَقۡدِرُۚ لَوۡلَاۤ اَنۡ مَّنَّ اللّٰهُ عَلَيۡنَا لَخَسَفَ بِنَا ؕ وَيۡكَاَنَّهٗ لَا يُفۡلِحُ الۡكٰفِرُوۡنَ﴿۸۲﴾
২৮-৮২ : পূর্বদিন যাহারা তাহার মত হইবার কামনা করিয়াছিল, তাহারা বলিতে লাগিল, ‘দেখিলে তো, আল্লাহ্ তাঁহার বান্দাদের মধ্যে যাহার জন্য ইচ্ছা তাহার রিযিক বর্ধিত করেন এবং যাহার জন্য ইচ্ছা হ্রাস করেন। যদি আল্লাহ্ আমাদের প্রতি সদয় না হইতেন তবে আমাদেরকেও তিনি ভূগর্ভে প্রোথিত করিতেন। দেখিলে তো! কাফিররা সফলকাম হয় না।’
تِلۡكَ الدَّارُ الۡاٰخِرَةُ نَجۡعَلُهَا لِلَّذِيۡنَ لَا يُرِيۡدُوۡنَ عُلُوًّا فِى الۡاَرۡضِ وَلَا فَسَادًا ؕ وَالۡعَاقِبَةُ لِلۡمُتَّقِيۡنَ ﴿۸۳﴾
২৮-৮৩ : ইহা আখিরাতের সেই আবাস যাহা আমি নির্ধারিত করি তাহাদের জন্য যাহারা এই পৃথিবীতে উদ্ধত হইতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করিতে চাহে না। শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য।
مَنۡ جَآءَ بِالۡحَسَنَةِ فَلَهٗ خَيۡرٌ مِّنۡهَا ۚ وَمَنۡ جَآءَ بِالسَّيِّئَةِ فَلَا يُجۡزَى الَّذِيۡنَ عَمِلُوا السَّيِّاٰتِ اِلَّا مَا كَانُوۡا يَعۡمَلُوۡنَ﴿۸۴﴾
২৮-৮৪ : যে কেহ সৎকর্ম লইয়া উপস্থিত হয় তাহার জন্য রহিয়াছে উহা অপেক্ষা উত্তম ফল, আর যে মন্দ কর্ম লইয়া উপস্থিত হয়, তবে যাহারা মন্দ কর্ম করে তাহাদেরকে তাহারা যাহা করিয়াছে উহারই শাস্তি দেওয়া হইবে।
اِنَّ الَّذِىۡ فَرَضَ عَلَيۡكَ الۡقُرۡاٰنَ لَرَآدُّكَ اِلٰى مَعَادٍ ؕ قُلْ رَّبِّىۡۤ اَعۡلَمُ مَنۡ جَآءَ بِالۡهُدٰى وَمَنۡ هُوَ فِىۡ ضَلٰلٍ مُّبِيۡنٍ﴿۸۵﴾
২৮-৮৫ : যিনি তোমার জন্য কুরআনকে করিয়াছেন বিধান তিনি তোমাকে অবশ্যই ফিরাইয়া আনিবেন জন্মভূমিতে। বল, ‘আমার প্রতিপালক ভাল জানেন কে সৎপথের নির্দেশ আনিয়াছে এবং কে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে আছে।’
وَمَا كُنۡتَ تَرۡجُوۡۤا اَنۡ يُّلۡقٰٓى اِلَيۡكَ الۡكِتٰبُ اِلَّا رَحۡمَةً مِّنۡ رَّبِّكَ فَلَا تَكُوۡنَنَّ ظَهِيۡرًا لِّـلۡكٰفِرِيۡنَ﴿۸۶﴾
২৮-৮৬ : তুমি আশা কর নাই যে, তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ হইবে। ইহা তো কেবল তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ। সুতরাং তুমি কখনও কাফিরদের সহায় হইও না।
وَلَا يَصُدُّنَّكَ عَنۡ اٰيٰتِ اللّٰهِ بَعۡدَ اِذۡ اُنۡزِلَتۡ اِلَيۡكَ وَادۡعُ اِلٰى رَبِّكَ وَلَا تَكُوۡنَنَّ مِنَ الۡمُشۡرِكِيۡنَۚ﴿۸۷﴾
২৮-৮৭ : তোমার প্রতি আল্লাহ্র আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর উহারা যেন তোমাকে কিছুতেই সেগুলি হইতে বিমুখ না করে। তুমি তোমার প্রতিপালকের দিকে আহ্বান কর এবং কিছুতেই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হইও না।
وَلَا تَدۡعُ مَعَ اللّٰهِ اِلٰهًا اٰخَرَۘ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ كُلُّ شَىۡءٍ هَالِكٌ اِلَّا وَجۡهَهٗؕ لَـهُ الۡحُكۡمُ وَاِلَيۡهِ تُرۡجَعُوۡنَ﴿۸۸﴾
২৮-৮৮ : তুমি আল্লাহ্র সঙ্গে অন্য ইলাহ্কে ডাকিও না, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নাই। আল্লাহ্র সত্তা ব্যতীত সমস্ত কিছুই ধ্বংসশীল। বিধান তাঁহারই এবং তাঁহারই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হইবে।