দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহ্র নামে,
নিচের ▶ বাটনে ক্লিক করুন১৬-১ : আল্লাহ্র আদেশ আসিবেই; সুতরাং উহা ত্বরান্বিত করিতে চাহিও না। তিনি মহিমান্বিত এবং উহারা যাহাকে শরীক করে তিনি তাহার ঊর্ধ্বে।
১৬-২ : তিনি তাঁহার বান্দাদের মধ্যে যাহার প্রতি ইচ্ছা স্বীয় নির্দেশে ওহীসহ ফিরিশ্তা প্রেরণ করেন এই বলিয়া যে, তোমরা সতর্ক কর, নিশ্চয়ই আমি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নাই; সুতরাং আমাকে ভয় কর।
১৬-৩ : তিনি যথাযথভাবে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করিয়াছেন; উহারা যাহা শরীক করে তিনি তাহার ঊর্ধ্বে।
১৬-৪ : তিনি শুক্র হইতে মানুষ সৃষ্টি করিয়াছেন; অথচ দেখ, সে প্রকাশ্য বিতণ্ডাকারী!
১৬-৫ : তিনি চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করিয়াছেন; তোমাদের জন্য উহাতে শীত নিবারক উপকরণ ও বহু উপকার রহিয়াছে। এবং উহা হইতে তোমরা আহার করিয়া থাক।
১৬-৬ : এবং তোমরা যখন গোধূলি লগ্নে উহাদেরকে চারণভূমি হইতে গৃহে লইয়া আস এবং প্রভাতে যখন উহাদেরকে চারণভূমিতে লইয়া যাও তখন তোমরা উহার সৌন্দর্য উপভোগ কর।
১৬-৭ : এবং উহারা তোমাদের ভার বহন করিয়া লইয়া যায় এমন দেশে যেখানে প্রাণান্ত ক্লেশ ব্যতীত তোমরা পৌঁছিতে পারিতে না। তোমাদের প্রতিপালক অবশ্যই দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।
১৬-৮ : তোমাদের আরোহণের জন্য ও শোভার জন্য তিনি সৃষ্টি করিয়াছেন অশ্ব, অশ্বতর ও গর্দভ এবং তিনি সৃষ্টি করেন এমন অনেক কিছু, যাহা তোমরা অবগত নও।
১৬-৯ : সরল পথ আল্লাহ্র কাছে পৌঁছায়, কিন্তু পথগুলির মধ্যে বক্র পথও আছে। তিনি ইচ্ছা করিলে তোমাদের সকলকেই সৎপথে পরিচালিত করিতেন।
১৬-১০ : তিনিই আকাশ হইতে বারিবর্ষণ করেন। উহাতে তোমাদের জন্য রহিয়াছে পানীয় এবং উহা হইতে জন্মায় উদ্ভিদ যাহাতে তোমরা পশুচারণ করিয়া থাক।
১৬-১১ : তিনি তোমাদের জন্য উহার দ্বারা জন্মান শস্য, যায়তূন, খর্জুর বৃক্ষ, দ্রাক্ষা এবং সর্বপ্রকার ফল। অবশ্যই ইহাতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রহিয়াছে নিদর্শন।
১৬-১২ : তিনিই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করিয়াছেন রজনী, দিবস, সূর্য এবং চন্দ্রকে; আর নক্ষত্ররাজিও অধীন হইয়াছে তাঁহারই নির্দেশে। অবশ্যই ইহাতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রহিয়াছে নিশ্চিত নিদর্শন -
১৬-১৩ : এবং তিনি বিবিধ প্রকার বস্তুও যাহা তোমাদের জন্য পৃথিবীতে সৃষ্টি করিয়াছেন, ইহাতে রহিয়াছে নিশ্চিত নিদর্শন সেই সম্প্রদায়ের জন্য যাহারা উপদেশ গ্রহণ করে।
১৬-১৪ : তিনিই সমুদ্রকে অধীন করিয়াছেন, যাহাতে তোমরা উহা হইতে তাজা মৎস্য আহার করিতে পার এবং যাহাতে উহা হইতে আহরণ করিতে পার রত্নাবলী, যাহা তোমরা ভূষণরূপে পরিধান কর; এবং তোমরা দেখিতে পাও, উহার বুক চিরিয়া নৌযান চলাচল করে এবং উহা এইজন্য যে, তোমরা যেন তাঁহার অনুগ্রহ সন্ধান করিতে পার এবং তোমরা যেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর;
১৬-১৫ : এবং তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করিয়াছেন, যাহাতে পৃথিবী তোমাদেরকে লইয়া আন্দোলিত না হয় এবং স্থাপন করিয়াছেন নদ - নদী ও পথ, যাহাতে তোমরা তোমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছিতে পার;
১৬-১৬ : এবং পথনির্ণায়ক চিহ্নসমূহও। আর উহারা নক্ষত্রের সাহায্যেও পথের নির্দেশ পায়।
১৬-১৭ : সুতরাং যিনি সৃষ্টি করেন তিনি কি তাহারই মত, যে সৃষ্টি করে না? তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করিবে না?
১৬-১৮ : তোমরা আল্লাহ্র অনুগ্রহ গণনা করিলে উহার সংখ্যা নির্ণয় করিতে পারিবে না। আল্লাহ্ তো অবশ্যই ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু।
১৬-১৯ : তোমরা যাহা গোপন রাখ এবং যাহা প্রকাশ কর আল্লাহ্ তাহা জানেন।
১৬-২০ : উহারা আল্লাহ্ ব্যতীত অপর যাহাদেরকে আহ্বান করে তাহারা কিছুই সৃষ্টি করে না, তাহাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়।
১৬-২১ : তাহারা নিষ্প্রাণ, নির্জীব এবং কখন তাহাদেরকে পুনরুত্থিত করা হইবে সে বিষয়ে তাহাদের কোন চেতনা নাই।
১৬-২২ : তোমাদের ইলাহ্ এক ইলাহ্, সুতরাং যাহারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না তাহাদের অন্তর সত্যবিমুখ এবং তাহারা অহংকারী।
১৬-২৩ : ইহা নিঃসন্দেহ যে, আল্লাহ্ জানেন যাহা উহারা গোপন করে এবং যাহা উহারা প্রকাশ করে। তিনি তো অহংকারীদেরকে পছন্দকরেন না।
১৬-২৪ : যখন উহাদেরকে বলা হয়, ‘তোমাদের প্রতিপালক কি অবতীর্ণ করিয়াছেন?’ তখন উহারা বলে, ‘পূর্ববর্তীদের উপকথা!’
১৬-২৫ : ফলে কিয়ামত দিবসে উহারা বহন করিবে উহাদের পাপভার পূর্ণ মাত্রায় এবং পাপভার তাহাদেরও যাহাদেরকে উহারা অজ্ঞতাহেতু বিভ্রান্ত করিয়াছে। দেখ, উহারা যাহা বহন করিবে তাহা কত নিকৃষ্ট!
১৬-২৬ : উহাদের পূর্ববর্তীরাও চক্রান্ত করিয়াছিল; আল্লাহ উহাদের ইমারতের ভিত্তিমূলে আঘাত করিয়াছিলেন; ফলে ইমারতের ছাদ উহাদের উপর ধসিয়া পড়িল এবং উহাদের প্রতি শাস্তি আসিল এমন দিক হইতে যাহা ছিল উহাদের ধারণার অতীত।
১৬-২৭ : পরে কিয়ামতের দিন তিনি উহাদেরকে লাঞ্ছিত করিবেন এবং তিনি বলিবেন, ‘কোথায় আমার সেই সমস্ত শরীক যাহাদের সম্বন্ধে তোমরা বিতণ্ডা করিতে?’ যাহাদেরকে জ্ঞান দান করা হইয়াছিল তাহারা বলিবে, ‘আজ লাঞ্ছনা ও অমঙ্গল কাফিরদের - ’
১৬-২৮ : যাহাদের মৃত্যু ঘটায় ফিরিশ্তাগণ উহারা নিজেদের প্রতি জুলুম করিতে থাকা অবস্থায়; অতঃপর উহারা আত্মসর্মপণ করিয়া বলিবে, ‘আমরা কোন মন্দ কর্ম করিতাম না।’ এবং নিশ্চয়ই তোমরা যাহা করিতে সে বিষয়ে আল্লাহ্ সবিশেষ অবহিত।
১৬-২৯ : সুতরাং তোমরা দ্বারগুলি দিয়া জাহান্নামে প্রবেশ কর, সেখানে তোমরা স্থায়ী হইবে। দেখ, অহংকারীদের আবাসস্থল কত নিকৃষ্ট!
১৬-৩০ : এবং যাহারা মুত্তাকী ছিল তাহাদেরকে বলা হইবে, ‘তোমাদের প্রতিপালক কী অবতীর্ণ করিয়াছিলেন?’ তাহারা বলিবে, ‘মহাকল্যাণ’। যাহারা সৎকর্ম করে তাহাদের জন্য আছে এই দুনিয়ায় মঙ্গল এবং আখিরাতের আবাস আরও উৎকৃষ্ট এবং মুত্তাকীদের আবাসস্থল কত উত্তম! -
১৬-৩১ : উহা স্থায়ী জান্নাত যাহাতে তাহারা প্রবেশ করিবে; উহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; তাহারা যাহা কিছু কামনা করিবে উহাতে তাহাদের জন্য তাহাই থাকিবে। এইভাবেই আল্লাহ্ পুরস্কৃত করেন মুত্তাকীদেরকে,
১৬-৩২ : ফিরিশ্তাগণ যাহাদের মৃত্যু ঘটায় পবিত্র থাকা অবস্থায়। ফিরিশ্তাগণ বলিবে, ‘তোমাদের প্রতি শান্তি! তোমরা যাহা করিতে তাহার ফলে জান্নাতে প্রবেশ কর।’
১৬-৩৩ : উহারা শুধু প্রতীক্ষা করে উহাদের নিকট ফিরিশ্তা আগমনের অথবা তোমার প্রতিপালকের শাস্তি আগমনের। উহাদের পূর্ববর্তীরা এইরূপই করিত। আল্লাহ্ উহাদের প্রতি কোন জুলুম করেন নাই, কিন্তু উহারাই নিজেদের প্রতি জুলুম করিত।
১৬-৩৪ : সুতরাং উহাদের উপর আপতিত হইয়াছিল উহাদেরই মন্দ কর্মের শাস্তি এবং উহাদেরকে পরিবেষ্টন করিয়াছিল তাহাই, যাহা লইয়া উহারা ঠাট্টা - বিদ্রপ করিত।
১৬-৩৫ : মুশরিকরা বলিবে, আল্লাহ্ ইচ্ছা করিলে আমাদের পিতৃপুরুষেরা ও আমরা তাঁহাকে ব্যতীত অপর কোন কিছুর ‘ইবাদত করিতাম না এবং তাঁহার অনুজ্ঞা ব্যতীত আমরা কোন কিছু নিষিদ্ধ করিতাম না।’ উহাদের পূর্ববর্তীরা এইরূপই করিত। রাসূলদের কর্তব্য তো কেবল সুস্পষ্ট বাণী পৌঁছাইয়া দেওয়া।
১৬-৩৬ : আল্লাহ্র ‘ইবাদত করিবার ও তাগূতকে বর্জন করিবার নির্দেশ দিবার জন্য আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠাইয়াছি। অতঃপর উহাদের কতককে আল্লাহ্ সৎপথে পরিচালিত করেন এবং উহাদের কতকের উপর পথভ্রান্তি সাব্যস্ত হইয়াছিল; সুতরাং পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর এবং দেখ, যাহারা সত্যকে মিথ্যা বলিয়াছে তাহাদের পরিণাম কী হইয়াছে!
১৬-৩৭ : তুমি উহাদের পথ প্রদর্শন করিতে আগ্রহী হইলেও আল্লাহ্ যাহাকে বিভ্রান্ত করিয়াছেন, তাহাকে তিনি সৎপথে পরিচালিত করিবেন না এবং উহাদের কোন সাহায্যকারীও নাই।
১৬-৩৮ : উহারা দৃঢ়তার সঙ্গে আল্লাহ্র শপথ করিয়া বলে, ‘যাহার মৃত্যু হয় আল্লাহ্ তাহাকে পুনর্জীবিত করিবেন না।’ কেন নয়, তিনি তাঁহার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করিবেনই। কিন্তু অধিকাংশ মানষু ইহা অবগত নহে -
১৬-৩৯ : তিনি পুনরুত্থিত করিবেন যে বিষয়ে উহাদের মতানৈক্য ছিল তাহা উহাদেরকে স্পষ্টভাবে দেখাইবার জন্য এবং যাহাতে কাফিররা জানিতে পারে যে, উহারাই ছিল মিথ্যাবাদী।
১৬-৪০ : আমি কোন কিছু ইচ্ছা করিলে সেই বিষয়ে আমার কথা কেবল এই যে, আমি বলি, ‘হও’, ফলে উহা হইয়া যায়।
১৬-৪১ : যাহারা অত্যাচারিত হইবার পর আল্লাহ্র পথে আল হিজরত করিয়াছে, আমি অবশ্যই তাহাদেরকে দুনিয়ায় উত্তম আবাস দিব; এবং আখিরাতের পুরস্কারই তো শ্রেষ্ঠ। হায়, উহারা যদি তাহা জানিত!
১৬-৪২ : যাহারা ধৈর্য ধারণ করে ও তাহাদের প্রতিপালকের উপর নির্ভর করে।
১৬-৪৩ : তোমার পূর্বে আমি ওহীসহ পুরুষই প্রেরণ করিয়াছিলাম, তোমরা যদি না জান তবে জ্ঞানীগণকে জিজ্ঞাসা কর -
১৬-৪৪ : প্রেরণ করিয়াছিলাম স্পষ্টভাবে প্রমাণাদি ও গ্রন্থাবলীসহ এবং তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করিয়াছি, মানুষকে সুস্পষ্ট বুঝাইয়া দিবার জন্য যাহা তাহাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হইয়াছিল, যাহাতে উহারা চিন্তা করে।
১৬-৪৫ : যাহারা কুকর্মের ষড়যন্ত্র করে তাহারা কি এ বিষয়ে নির্ভয় হইয়াছে যে, আল্লাহ উহাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করিবেন না অথবা এমন দিক হইতে শাস্তি আসিবে না, যাহা উহাদের ধারণাতীত?
১৬-৪৬ : অথবা চলাফেরা করিতে থাকাকালে তিনি উহাদের ধৃত করিবেন না? উহারা তো ইহা ব্যর্থ করিতে পারিবে না।
১৬-৪৭ : অথবা উহাদেরকে তিনি ভীত - সন্ত্রস্ত অবস্থায় ধৃত করিবেন না? তোমাদের প্রতিপালক তো অবশ্যই দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।
১৬-৪৮ : উহারা কি লক্ষ্য করে না আল্লাহ্র সৃষ্ট বস্তুর প্রতি, যাহার ছায়া দক্ষিণে ও বামে ঢলিয়া পড়িয়া আল্লাহ্র প্রতি সিজ্দাবনত হয়?
১৬-৪৯ : আল্লাহ্কেই সিজ্দা করে যাহা কিছু আছে আকাশমণ্ডলীতে, পৃথিবীতে যত জীবজন্তু আছে সে সমস্ত এবং ফিরিশ্তাগণও, উহারা অহংকার করে না।
১৬-৫০ : উহারা ভয় করে উহাদের উপর উহাদের প্রতিপালককে এবং উহাদেরকে যাহা আদেশ করা হয় উহারা তাহা করে।
১৬-৫১ : আল্লাহ্ বলিলেন, ‘তোমরা দুই ইলাহ্ গ্রহণ করিও না; তিনিই তো একমাত্র ইলাহ্। সুতরাং আমাকেই ভয় কর।’
১৬-৫২ : আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে তাহা তাঁহারই এবং নিরবচ্ছিন্ন আনুগত্য তাঁহারই প্রাপ্য। তোমরা কি আল্লাহ্ ব্যতিত অপরকে ভয় করিবে?
১৬-৫৩ : তোমাদের নিকট যে সমস্ত নিয়ামত রহিয়াছে তাহা তো আল্লাহ্রই নিকট হইতে; আবার যখন দুঃখ - দৈন্য তোমাদেরকে স্পর্শ করে তখন তোমরা তাঁহাকেই ব্যাকুলভাবে আহ্বান কর।
১৬-৫৪ : আবার যখন আল্লাহ্ তোমাদের দুঃখ - দৈন্য দূরীভূত করেন তখন তোমাদের একদল উহাদের প্রতিপালকের শরীক করে -
১৬-৫৫ : আমি উহাদেরকে যাহা দান করিয়াছি তাহা অস্বীকার করিবার জন্য। সুতরাং ভোগ করিয়া লও, অচিরেই জানিতে পারিবে।
১৬-৫৬ : আমি উহাদেরকে যে রিযিক দান করি উহারা তাহার এক অংশ নির্ধারণ করে তাহাদের জন্য যাহাদের সম্বন্ধে উহারা কিছুই জানে না। শপথ আল্লাহ্র! তোমরা যে মিথ্যা উদ্ভাবন কর সেই সম্বন্ধে তোমাদেরকে অবশ্যই প্রশ্ন করা হইবে।
১৬-৫৭ : উহারা নির্ধারণ করে আল্লাহ্র জন্য কন্যা সন্তান - তিনি পবিত্র, মহিমান্বিত এবং উহাদের জন্য তাহাই, যাহা উহারা কামনা করে!
১৬-৫৮ : উহাদের কাহাকেও যখন কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয় তখন তাহার মুখমণ্ডল কালো হইয়া যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়।
১৬-৫৯ : উহাকে যে সংবাদ দেওয়া হয়, তাহার গ্লানি হেতু সে নিজ সম্প্রদায় হইতে আত্মগোপন করে। সে চিন্তা করে হীনতা সত্ত্বেও সে উহাকে রাখিয়া দিবে, না মাটিতে পুঁতিয়া দিবে! সাবধান! উহারা যাহা সিদ্ধান্ত নেয় তাহা কত নিকৃষ্ট।
১৬-৬০ : যাহারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না উহারা নিকৃষ্ট প্রকৃতির, আর আল্লাহ্ তো মহত্তম প্রকৃতির; এবং তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
১৬-৬১ : আল্লাহ্ যদি মানুষকে তাহাদের সীমালংঘনের জন্য শাস্তি দিতেন তবে ভূপৃষ্ঠে কোন জীব - জন্তুকেই রেহাই দিতেন না; কিন্তু তিনি এক নিদির্ষ্ট কাল পর্যন্ত তাহাদেরকে অবকাশ দিয়া থাকেন। অতঃপর যখন তাহাদের সময় আসে তখন তাহারা মুহূর্তকাল বিলম্ব অথবা ত্বরা করিতে পারে না।
১৬-৬২ : যাহা তাহারা অপছন্দকরে তাহাই তাহারা আল্লাহর প্রতি আরোপ করে। তাহাদের জিহ্বা মিথ্যা বর্ণনা করে যে, মঙ্গল তাহাদেরই জন্য। নিঃসন্দেহে তাহাদের জন্য আছে দোযখ এবং তাহাদেরকেই সর্বাগ্রে উহাতে নিক্ষেপ করা হইবে।
১৬-৬৩ : শপথ আল্লাহ্র! আমি তোমার পূর্বেও বহু জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করিয়াছি; কিন্তু শয়তান ঐসব জাতির কার্যকলাপ উহাদের দৃষ্টিতে শোভন করিয়াছিল; সুতরাং সে - ই আজ উহাদের অভিভাবক এবং উহাদেরই জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি।
১৬-৬৪ : আমি তো তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছি যাহারা এ বিষয়ে মতভেদ করে তাহাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বুঝাইয়া দিবার জন্য এবং মু’মিনদের জন্য পথনির্দেশ ও দয়াস্বরূপ।
১৬-৬৫ : আল্লাহ্ আকাশ হইতে বারি বর্ষণ করেন এবং তদ্দ্বারা তিনি ভূমিকে উহার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন। অবশ্যই ইহাতে নিদর্শন আছে, যে সম্প্রদায় কথা শুনে তাহাদের জন্য।
১৬-৬৬ : অবশ্যই গবাদিপশুর মধ্যে তোমাদের জন্য শিক্ষা রহিয়াছে। উহাদের উদরস্থিত গোবর ও রক্তের মধ্য হইতে তোমাদেরকে পান করাই বিশুদ্ধ দুগ্ধ, যাহা পানকারীদের জন্য সুস্বাদু।
১৬-৬৭ : এবং খর্জুর - বৃক্ষের ফল ও আঙ্গুর হইতে তোমরা মাদক ও উত্তম খাদ্য গ্রহণ করিয়া থাক; ইহাতে অবশ্যই বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রহিয়াছে নিদর্শন।
১৬-৬৮ : তোমার প্রতিপালক মৌমাছিকে উহার অন্তরে ইঙ্গিত দ্বারা নির্দেশ দিয়াছেন, ‘গৃহ নির্মাণ কর পাহাড়ে, বৃক্ষে ও মানুষ যে গৃহ নির্মাণ করে তাহাতে;
১৬-৬৯ : ‘ইহার পর প্রত্যেক ফল হইতে কিছু কিছু আহার কর, অতঃপর তোমার প্রতিপালকের সহজ পথ অনুসরণ কর।’ উহার উদর হইতে নির্গত হয় বিবিধ বর্ণের পানীয়; যাহাতে মানুষের জন্য রহিয়াছে আরোগ্য। অবশ্যই ইহাতে রহিয়াছে নিদর্শন চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য।
১৬-৭০ : আল্লাহ্ই তোমাদেরকে সৃষ্টি করিয়াছেন; অতঃপর তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাইবেন এবং তোমাদের মধ্যে কাহাকেও কাহাকেও উপনীত করা হইবে নিকৃষ্টতম বয়সে; ফলে উহারা যাহা কিছু জানিত সে সমন্ধে উহারা স্বজ্ঞান থাকিবে না। নিশ্চই আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ সর্বশক্তিমান।
১৬-৭১ : আল্লাহ্ জীবনোপকরণে তোমাদের কাহাকেও কাহারও উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়াছেন। যাহাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হইয়াছে তাহারা তাহাদের অধীনস্থ দাস - দাসীদেরকে নিজেদের জীবনোপকরণ হইতে এমন কিছু দেয় না যাহাতে উহারা এ বিষয়ে তাহাদের সমান হইয়া যায়। তবে কি উহারা আল্লাহ্র অনুগ্রহ অস্বীকার করে?
১৬-৭২ : এবং আল্লাহ্ তোমাদের হইতেই তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করিয়াছেন এবং তোমাদের যুগল হইতে তোমাদের জন্য পুত্র - পৌত্আর্ রাদি সৃষ্টি করিয়াছেন এবং তোমাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ দান করিয়াছেন। তবুও কি উহারা মিথ্যায় বিশ্বাস করিবে এবং উহারা কি আল্লাহ্র অনুগ্রহ অস্বীকার করিবে? -
১৬-৭৩ : এবং উহারা কি ‘ইবাদত করিবে আল্লাহ্ ব্যতীত অপরের যাহাদের আকাশমণ্ডলী অথবা পৃথিবী হইতে কোন জীবনোপকরণ সরবরাহ করিবার শক্তি নাই! - এবং উহারা কিছুই করিতে সক্ষম নয়।
১৬-৭৪ : সুতরাং তোমরা আল্লাহ্র কোন সদৃশ স্থির করিও না। আল্লাহ্ জানেন এবং তোমরা জান না।
১৬-৭৫ : আল্লাহ্ উপমা দিতেছেন অপরের অধিকারভুক্ত এক দাসের, যে কোন কিছুর উপর শক্তি রাখে না এবং এমন এক ব্যক্তির যাহাকে তিনি নিজ হইতে উত্তম রিযিক দান করিয়াছেন এবং সে উহা হইতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে; উহারা কি একে অপরের সমান? সকল প্রশংসা আল্লাহ্রই প্রাপ্য অথচ উহাদের অধিকাংশই ইহা জানে না।
১৬-৭৬ : আল্লাহ্ আরও উপমা দিতেছেন দুই ব্যক্তির : উহাদের একজন মূক, কোন কিছুরই শক্তি রাখে না এবং সে তাহার প্রভুর ভারস্বরূপ; তাহাকে যেখানেই পাঠান হউক না কেন সে ভাল কিছুই করিয়া আসিতে পারে না ; সে কি সমান হইবে ঐ ব্যক্তির, যে ন্যায়ের নির্দেশ দেয় এবং যে আছে সরল পথে?
১৬-৭৭ : আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহ্রই এবং কিয়ামতের ব্যাপার তো চক্ষুর পলকের ন্যায়, বরং উহা অপেক্ষাও স্বত্বর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
১৬-৭৮ : এবং আল্লাহ্ তোমাদেরকে বাহির করিয়াছেন তোমাদের মাতৃগর্ভ হইতে এমন অবস্থায় যে, তোমরা কিছুই জানিতে না। তিনি তোমাদেরকে দিয়াছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং হৃদয়, যাহাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
১৬-৭৯ : তাহারা কি লক্ষ্য করে না আকাশের শূন্যগর্ভে নিয়ন্ত্রণাধীন বিহংগের প্রতি? আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কেহই সেইগুলিকে স্থির রাখে না। অবশ্যই ইহাতে নিদর্শন রহিয়াছে মু’মিন সম্প্রদায়ের জন্য।
১৬-৮০ : এবং আল্লাহ্ তোমাদের গৃহকে করেন তোমাদের আবাসস্থল এবং তিনি তোমাদের জন্য পশুচর্মের তাঁবুর ব্যবস্থা করেন, তোমরা উহাকে সহজ মনে কর ভ্রমণকালে এবং অবস্থানকালে। এবং তিনি তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন উহাদের পশম, লোম ও কেশ হইতে কিছু কালের গৃহসামগ্রী ও ব্যবহার - উপকরণ।
১৬-৮১ : এবং আল্লাহ্ যাহা কিছু সৃষ্টি করিয়াছেন তাহা হইতে তিনি তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেন এবং তোমাদের জন্য পাহাড়ে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন এবং তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন পরিধেয় বস্ত্রের; উহা তোমাদেরকে তাপ হইতে রক্ষা করে এবং তিনি ব্যবস্থা করেন তোমাদের জন্য বর্মের, উহা তোমাদেরকে যুদ্ধে রক্ষা করে। এইভাবে তিনি তোমাদের প্রতি তাঁহার অনুগ্রহ পূর্ণ করেন যাহাতে তোমরা আত্মসমর্পণ কর।
১৬-৮২ : অতঃপর উহারা যদি মুখ ফিরাইয়া নেয় তবে তোমার কর্তব্য তো কেবল স্পষ্টভাবে বাণী পৌঁছাইয়া দেওয়া।
১৬-৮৩ : উহারা আল্লাহ্র নিয়ামত চিনিতে পারে; তারপরও সেগুলি উহারা অস্বীকার করে এবং উহাদের অধিকাংশই কাফির।
১৬-৮৪ : যেদিন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায় হইতে এক একজন সাক্ষী উত্থিত করিব সেদিন কাফিরদেরকে অনুমতি দেওয়া হইবে না এবং উহাদের কোন ওযরও গৃহীত হইবে না।
১৬-৮৫ : যখন জালিমরা শাস্তি প্রত্যক্ষ করিবে তখন উহাদের শাস্তিলঘু করা হইবে না এবং উহাদেরকে কোন অবকাশ দেওয়া হইবে না।
১৬-৮৬ : মুশরিকরা যাহাদেরকে আল্লাহ্র শরীক করিয়াছিল, তাহাদেরকে যখন দেখিবে তখন তাহারা বলিবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! ইহারাই তাহারা, যাহাদেরকে আমরা তোমার শরীক করিয়াছিলাম, যাহাদেরকে আমরা আহ্বান করিতাম তোমার পরিবর্তে; অতঃপর তদুত্তরে উহারা বলিবে, ‘তোমরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।’
১৬-৮৭ : সেই দিন তাহারা আল্লাহ নিকট আত্মসর্মপণ করিবে এবং তাহারা যে মিথ্যা উদ্ভাবন করিত তাহা তাহাদের জন্য নিষ্ফল হইবে।
১৬-৮৮ : আমি শাস্তির পর শাস্তি বৃদ্ধি করিব কাফিরদের ও আল্লাহ্র পথে বাধাদানকারীদের; কারণ তাহারা অশান্তি সৃষ্টি করিত।
১৬-৮৯ : সেই দিন আমি উত্থিত করিব প্রত্যেক সম্প্রদায়ে তাহাদেরই মধ্য হইতে তাহাদের বিষয়ে এক একজন সাক্ষী এবং তোমাকে আমি আনিব সাক্ষীরূপে ইহাদের বিষয়ে। আমি আত্মাসমপর্ণকারীদের জন্য প্রত্যেক বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যাস্বরূপ, পথনির্দেশ, দয়া ও সুসংবাদস্বরূপ তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করিলাম।
১৬-৯০ : নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয় - স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি নিষেধ করেন অশ্লীলতা, অসৎকর্ম ও সীমালংঘন; তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন যাহাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।
১৬-৯১ : তোমরা আল্লাহ্র অঙ্গীকার পূর্ণ করিও যখন পরস্পর অঙ্গীকার কর এবং তোমরা আল্লাহ্কে তোমাদের যামিন করিয়া শপথ দৃঢ় করিবার পর উহা ভঙ্গ করিও না। তোমরা যাহা কর নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা জানেন।
১৬-৯২ : তোমরা সেই নারীর মত হইও না, যে তাহার সূতা মযবুত করিয়া পাকাইবার পর উহার পাক খুলিয়া নষ্ট করিয়া দেয়। তোমাদের শপথ তোমরা পরস্পরকে প্রবঞ্চনা করিবার জন্য ব্যবহার করিয়া থাক, যাহাতে একদল অন্যদল অপেক্ষা অধিক লাভবান হও। আল্লাহ্ তো ইহা দ্বারা কেবল তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন। আল্লাহ্ কিয়ামতের দিন তাহা নিশ্চয়ই স্পষ্টভাবে প্রকাশ করিয়া দিবেন যে বিষয়ে তোমরা মতভেদ করিতে।
১৬-৯৩ : ইচ্ছা করিলে আল্লাহ্ তোমাদেরকে এক জাতি করিতে পারিতেন, কিন্তু তিনি যাহাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং যাহাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন। তোমরা যাহা কর সে বিষয়ে অবশ্যই তোমাদেরকে প্রশ্ন করা হইবে।
১৬-৯৪ : পরস্পর প্রবঞ্চনা করিবার জন্য তোমরা তোমাদের শপথকে ব্যবহার করিও না; করিলে পা স্থির হওয়ার পর পিছলাইয়া যাইবে এবং আল্লাহ্র পথে বাধা দেওয়ার কারণে তোমরা শাস্তির আস্বাদ গ্রহণ করিবে; তোমাদের জন্য রহিয়াছে মহাশাস্তি।
১৬-৯৫ : তোমরা আল্লাহ্র সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করিও না। আল্লাহ্র নিকট যাহা আছে কেবল তাহাই তোমাদের জন্য উত্তম - যদি তোমরা জানিতে!
১৬-৯৬ : তোমাদের নিকট যাহা আছে তাহা নিঃশেষ হইবে এবং আল্লাহ্র নিকট যাহা আছে তাহা স্থায়ী। যাহারা ধৈর্য ধারণ করে আমি নিশ্চয়ই তাহাদেরকে তাহারা যাহা করে তাহা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করিব।
১৬-৯৭ : মু’মিন হইয়া পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকর্ম করিবে তাহাকে আমি নিশ্চয়ই পবিত্র জীবন দান করিব এবং তাহাদেরকে তাহাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করিব।
১৬-৯৮ : যখন কুরআন পাঠ করিবে তখন অভিশপ্ত শয়তান হইতে আল্লাহ্র শরণ লইবে।
১৬-৯৯ : নিশ্চয়ই উহার কোন আধিপত্য নাই তাহাদের উপর যাহারা ঈমান আনে ও তাহাদের প্রতিপালকেরই উপর নির্ভর করে।
১৬-১০০ : উহার আধিপত্য তো কেবল তাহাদেরই উপর যাহারা উহাকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে এবং যাহারা আল্লাহ্র শরীক করে।
১৬-১০১ : আমি যখন এক আয়াতের পরিবর্তে অন্য এক আয়াত উপস্থিত করি - আল্লাহ্ যাহা অবতীর্ণ করেন তাহা তিনিই ভাল জানেন, তখন তাহারা বলে, ‘তুমি তো কেবল মিথ্যা উদ্ভাবনকারী’; কিন্তু উহাদের অধিকাংশই জানে না।
১৬-১০২ : বল, ‘তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে রুহুল - কুদুস জিবরাঈল সত্যসহ কুরআন অবতীর্ণ করিয়াছে, যাহারা মু’মিন তাহাদেরকে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত করিবার জন্য এবং হিদায়াত ও সুসংবাদস্বরূপ মুসলিমদের জন্য।’
১৬-১০৩ : আমি তো জানি, তাহারা বলে, ‘তাহাকে শিক্ষা দেয় এক মানুষ।’ উহারা যাহার প্রতি ইহা আরোপ করে তাহার ভাষা তো আরবী নয়; কিন্তু কুরআনের ভাষা স্পষ্ট আরবী ভাষা।
১৬-১০৪ : যাহারা আল্লাহ্র নিদর্শনে বিশ্বাস করে না, তাহাদেরকে আল্লাহ্ হিদায়াত করেন না এবং তাহাদের জন্য আছে মর্মন্তুদ শাস্তি।
১৬-১০৫ : যাহারা আল্লাহ্র নিদর্শনে বিশ্বাস করে না তাহারা তো কেবল মিথ্যা উদ্ভাবন করে এবং তাহারাই মিথ্যাবাদী।
১৬-১০৬ : কেহ তাহার ঈমান আনার পর আল্লাহ্কে অস্বীকার করিলে এবং কুফরীর জন্য হৃদয় উন্মুক্ত রাখিলে তাহার উপর আপতিত হইবে আল্লাহ্র গযব এবং তাহার জন্য আছে মহাশাস্তি; তবে তাহার জন্য নয়, যাহাকে কুফরীর জন্য বাধ্য করা হয় কিন্তু তাহার চিত্ত ঈমানে অবিচলিত।
১৬-১০৭ : ইহা এইজন্য যে, তাহারা দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের উপর প্রাধান্য দেয় এবং আল্লাহ্ কাফির সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।
১৬-১০৮ : উহারাই তাহারা, আল্লাহ্ যাহাদের অন্তর, কর্ণ ও চক্ষু মোহর করিয়া দিয়াছেন এবং উহারাই গাফিল।
১৬-১০৯ : নিশ্চয়ই উহারা তো আখিরাতে হইবে ক্ষতিগ্রস্ত।
১৬-১১০ : যাহারা নির্যাতিত হইবার পর আল হিজরত করে, পরে জিহাদ করে এবং ধৈর্য ধারণ করেন, তোমার প্রতিপালক এই সবের পর, তাহাদের প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
১৬-১১১ : স্মরণ কর সেই দিনকে, যেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি আত্মসমর্থনে যুক্তি উপস্থিত করিতে আসিবে এবং প্রত্যেককে তাহার কৃতকর্মের পূর্ণফল দেওয়া হইবে। এবং তাহাদের প্রতি জুলুম করা হইবে না।
১৬-১১২ : আল্লাহ্ দৃষ্টান্ত দিতেছেন এক জনপদের যাহা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত, যেখানে আসিত সর্বদিক হইতে উহার প্রচুর জীবনোপকরণ; অতঃপর উহা আল্লাহ্র অনুগ্রহ অস্বীকার করিল, ফলে তাহারা যাহা করিত তজ্জন্য আল্লাহ তাহাদেরকে স্বাদ গ্রহণ করাইলেন ক্ষুধা ও ভীতির আচ্ছাদনের।
১৬-১১৩ : তাহাদের নিকট তো আসিয়াছিল এক রাসূল তাহা - দেরই মধ্য হইতে, কিন্তু তাহারা তাহাকে অস্বীকার করিয়াছিল। ফলে সীমালংঘন করা অবস্থায় শাস্তি তাহাদেরকে গ্রাস করিল।
১৬-১১৪ : আল্লাহ্ তোমাদেরকে হালাল ও পবিত্র যাহা দিয়াছেন তাহা হইতে তোমরা আহার কর এবং আল্লাহ্র অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর যদি তোমরা কেবল তাঁহারই ‘ইবাদত কর।
১৬-১১৫ : আল্লাহ্ তো কেবল মৃত জন্তু, রক্ত, শূকর - মাংস এবং যাহা যবেহকালে আল্লাহ্র পরিবর্তে অন্যের নাম লওয়া হইয়াছে তাহাই তোমাদের জন্য হারাম করিয়াছেন, কিন্তু কেহ অবাধ্য কিংবা সীমা লঙ্ঘনকারী না হইয়া অনোন্যপায় হইলে আল্লাহ্ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
১৬-১১৬ : তোমাদের জিহ্বা মিথ্যা আরোপ করে বলিয়া আল্লাহ্র প্রতি মিথ্যা আরোপ করিবার জন্য তোমরা বলিও না, ‘ইহা হালাল এবং উহা হারাম।’ নিশ্চয়ই যাহারা আল্লাহ্ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করিবে তাহারা সফলকাম হইবে না।
১৬-১১৭ : উহাদের সুখ - সম্ভোগ সামান্যই এবং উহাদের জন্য রহিয়াছে মর্মন্তুদ শাস্তি।
১৬-১১৮ : ইয়াহূদীদের জন্য আমি তো কেবল তাহাই হারাম করিয়াছিলাম যাহা তোমার নিকট আমি পূর্বে উল্লেখ করিয়াছি এবং আমি উহাদের উপর কোন জুলুম করি নাই, কিন্তু উহারাই জুলুম করিত নিজেদের প্রতি।
১৬-১১৯ : অতঃপর যাহারা অজ্ঞতাবশত মন্দ কর্ম করে তাহারা পরে তওবা করিলে ও নিজেদেরকে সংশোধন করিলে তাহাদের জন্য তোমার প্রতিপালক অবশ্য অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
১৬-১২০ : ইব্রাহিম ছিল এক ‘উম্মত’, আল্লাহ্র অনুগত, একনিষ্ঠ এবং সে ছিল না মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত;
১৬-১২১ : সে ছিল আল্লাহ্র অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞ; আল্লাহ্ তাহাকে মনোনীত করিয়াছিলেন এবং তাহাকে পরিচালিত করিয়াছিলেন সরল পথে।
১৬-১২২ : আমি তাহাকে দুনিয়ায় দিয়াছিলাম মঙ্গল এবং আখিরাতেও, সে নিশ্চয়ই সৎকর্মপরায়ণদের অন্যতম।
১৬-১২৩ : এখন আমি তোমাদের প্রতি প্রত্যাদেশ করিলাম, ‘তুমি একনিষ্ঠ ইব্রাহীমের ধর্মাদর্শ অনুসরণ কর; এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
১৬-১২৪ : শনিবার পালন তো কেবল তাহাদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হইয়াছিল, যাহারা এ সম্বন্ধে মতভেদ করিত। যে বিষয়ে উহারা মতভেদ করিত তোমার প্রতিপালক তো অবশ্যই কিয়ামতের দিন সে বিষয়ে উহাদের বিচার - মীমাংসা করিয়া দিবেন।
১৬-১২৫ : তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহ্বান কর হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং উহাদের সঙ্গে তর্ক করিবে উত্তম পন্থায়। তোমার প্রতিপালক, তাঁহার পথ ছাড়িয়া কে বিপথগামী হয়, সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত এবং কাহারা সৎপথে আছে তাহাও তিনি সবিশেষ অবহিত।
১৬-১২৬ : যদি তোমরা শাস্তি দাওই, তবে ঠিক ততখানি শাস্তি দিবে যতখানি অন্যায় তোমাদের প্রতি করা হইয়াছে। তবে তোমরা ধৈর্য ধারণ করিলে ধৈর্যশীলদের জন্য উহাই তো উত্তম।
১৬-১২৭ : তুমি ধৈর্য ধারণ কর, তোমার ধৈর্য তো আল্লাহ্রই সাহায্যে। উহাদের দরুন দুঃখ করিও না এবং উহাদের ষড়যন্ত্রে তুমি মনঃক্ষুণ্ন হইও না।
১৬-১২৮ : আল্লাহ্ তাহাদেরই সঙ্গে আছে যাহারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যাহারা সৎকর্মপরায়ণ।