দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহ্র নামে,
নিচের ▶ বাটনে ক্লিক করুন২২-১ : হে মানুষ! ভয় কর তোমাদের প্রতিপালককে; কিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ংকর ব্যাপার!
২২-২ : যেদিন তোমরা উহা প্রত্যক্ষ করিবে সেই দিন প্রত্যেক স্তন্যদাত্রী বিস্মৃত হইবে তাহার দুগ্ধপোষ্য শিশুকে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী তাহার গর্ভপাত করিয়া ফেলিবে ; মানুষকে দেখিবে নেশাগ্রস্তসদৃশ, যদিও উহারা নেশাগ্রস্ত নয়। বস্তুত আল্লাহ্র শাস্তি কঠিন।
২২-৩ : মানুষের মধ্যে কতক অজ্ঞানতাবশত আল্লাহ্ সম্বন্ধে বিতণ্ডা করে এবং অনুসরণ করে প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তানের,
২২-৪ : তাহার সম্বন্ধে এই নিয়ম করিয়া দেওয়া হইয়াছে যে, যে কেহ তাহার সঙ্গে বন্ধুত্ব করিবে সে তাহাকে পথভ্রষ্ট করিবে এবং তাহাকে পরিচালিত করিবে প্রজ্বলিত অগ্নির শাস্তির দিকে।
২২-৫ : হে মানুষ ! পুনরুত্থান সম্বন্ধে যদি তোমরা সন্দিগ্ধ হও তবে অবধান কর - আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করিয়াছি মৃত্তিকা হইতে, তাহার পর শুক্র হইতে, তাহার পর ‘আল আলাকা’ হইতে, তাহার পর পূর্ণাকৃতি অথবা অপূর্ণাকৃতি গোশত্পিণ্ড হইতে - তোমাদের নিকট ব্যক্ত করিবার জন্য, আমি যাহা ইচ্ছা করি তাহা এক নির্দিষ্ট কালের জন্য মাতৃগর্ভে স্থিত রাখি, তাহার পর আমি তোমাদেরকে শিশুরূপে বাহির করি, পরে যাহাতে তোমরা পরিণত বয়সে উপনীত হও। তোমাদের মধ্যে কাহারও কাহারও মৃত্যু ঘটান হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাহাকেও কাহাকেও প্রত্যাবৃত্ত করা হয় হীনতম বয়সে, যাহার ফলে উহারা যাহা কিছু জানিত সে সম্বন্ধে উহারা সজ্ঞান থাকে না। তুমি ভূমিকে দেখ শুষ্ক, অতঃপর উহাতে আমি বারি বর্ষণ করিলে উহা শস্য - শ্যামলা হইয়া আন্দোলিত ও স্ফীত হয় এবং উদ্গত করে সর্বপ্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদ;
২২-৬ : ইহা এইজন্য যে, আল্লাহ্ সত্য এবং তিনিই মৃতকে জীবন দান করেন এবং তিনি সর্ববিষয়ে শক্তিমান;
২২-৭ : এবং কিয়ামত আসিবেই, ইহাতে কোন সন্দেহ নাই এবং কবরে যাহারা আছে তাহাদেরকে নিশ্চয়ই আল্লাহ্ উত্থিত করিবেন।
২২-৮ : মানুষের মধ্যে কেহ কেহ আল্লাহ্ সম্বন্ধে বিতণ্ডা করে; তাহাদের না আছে জ্ঞান, না আছে পথনির্দেশ, না আছে কোন দীপ্তিমান কিতাব।
২২-৯ : সে বিতণ্ডা করে ঘাড় বাঁকাইয়া লোকদেরকে আল্লাহ্র পথ হইতে ভ্রষ্ট করিবার জন্য। তাহার জন্য লাঞ্ছনা আছে ইহলোকে এবং কিয়ামত দিবসে আমি তাহাকে আস্বাদ করাইব দহন - যন্ত্রণা।
২২-১০ : সেদিন তাহাকে বলা হইবে, ‘ইহা তোমার কৃতকর্মেরই ফল, কারণ আল্লাহ্ বান্দাদের প্রতি জুলুম করেন না।’
২২-১১ : মানুষের মধ্যে কেহ কেহ আল্লাহ্র ‘ইবাদত করে দ্বিধার সঙ্গে; তাহার মঙ্গল হইলে তাহাতে তাহার চিত্ত প্রশান্ত হয় এবং কোন বিপর্যয় ঘটিলে সে তাহার পূর্বাবস্থায় ফিরিয়া যায়। সে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দুনিয়াতে ও আখিরাতে ; ইহাই তো সুস্পষ্ট ক্ষতি।
২২-১২ : সে আল্লাহ্র পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে যাহা উহার কোন অপকার করিতে পারে না, উপকারও করিতে পারে না; ইহাই চরম বিভ্রান্তি।
২২-১৩ : সে ডাকে এমন কিছুকে যাহার ক্ষতিই উহার উপকার অপেক্ষা নিকটতর। কত নিকৃষ্ট এই অভিভাবক এবং কত নিকৃষ্ট এই সহচর !
২২-১৪ : যাহারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ্ অবশ্যই তাহাদেরকে দাখিল করিবেন জান্নাতে, যাহার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত। আল্লাহ্ যাহা ইচ্ছা তাহাই করেন।
২২-১৫ : যে কেহ মনে করে, আল্লাহ্ তাহাকে কখনই দুনিয়া ও আখিরাতে সাহায্য করিবেন না, সে আকাশের দিকে একটি রজ্জু বিলম্বিত করুক, পরে উহা বিচ্ছিন্ন করুক; অতঃপর দেখুক তাহার প্রচেষ্টা তাহার আক্রোশের হেতু দূর করে কি না।
২২-১৬ : এইভাবেই আমি সুস্পষ্ট নিদর্শনরূপে উহা অবতীর্ণ করিয়াছি; আর আল্লাহ্ তো যাহাকে ইচ্ছা সৎপথ প্রদর্শন করেন।
২২-১৭ : নিশ্চয়ই যাহারা ঈমান আনিয়াছে এবং যাহারা ইয়াহূদী হইয়াছে, যাহারা সাবিয়ী, খ্রিস্টান ও অগ্নিপূজক এবং যাহারা মুশরিক হইয়াছে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাহাদের মধ্যে ফয়সালা করিয়া দিবেন। আল্লাহ্ তো সব কিছুর সম্যক প্রত্যক্ষকারী।
২২-১৮ : তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ্কে সিজ্দা করে যাহা কিছু আছে আকাশমণ্ডলীতে ও পৃথিবীতে, সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্রমণ্ডলী, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু এবং সিজ্দা করে মানুষের মধ্যে অনেকে? আবার অনেকের প্রতি অবধারিত হইয়াছে শাস্তি। আল্লাহ্ যাহাকে হেয় করেন তাহার সম্মানদাতা কেহই নাই; আল্লাহ্ যাহা ইচ্ছা তাহা করেন।
২২-১৯ : ইহারা দুইটি বিবদমান পক্ষ, তাহারা তাহাদের প্রতিপালক সম্বন্ধে বিতর্ক করে ; যাহারা কুফরী করে তাহাদের জন্য প্রস্তুত করা হইয়াছে আগুনের পোশাক, তাহাদের মাথার উপর ঢালিয়া দেওয়া হইবে ফুটন্ত পানি,
২২-২০ : যাহা দ্বারা উহাদের উদরে যাহা আছে তাহা এবং উহাদের চর্ম বিগলিত করা হইবে।
২২-২১ : এবং উহাদের জন্য থাকিবে লৌহমুদগর।
২২-২২ : যখনই উহারা যন্ত্রণাকাতর হইয়া জাহান্নাম হইতে বাহির হইতে চাহিবে তখনই তাহাদেরকে ফিরাইয়া দেওয়া হইবে উহাতে; উহাদেরকে বলা হইবে, ‘আস্বাদন কর দহন - যন্ত্রণা।’
২২-২৩ : যাহারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ্ তাহাদেরকে দাখিল করিবেন জান্নাতে যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তাহাদেরকে অলঙ্কৃত করা হইবে স্বর্ণ - কঙ্কন ও মুক্তা দ্বারা এবং সেখানে তাহাদের পোশাক - পরিচ্ছদ হইবে রেশমের।
২২-২৪ : তাহাদেরকে পবিত্র বাক্যের অনুগামী করা হইয়াছিল এবং তাহারা পরিচালিত হইয়াছিল পরম প্রশংসাভাজন আল্লাহ্র পথে।
২২-২৫ : যাহারা কুফরী করে এবং মানুষকে নিবৃত্ত করে আল্লাহ্র পথ হইতে ও মসজিদুল হারাম হইতে, যাহা আমি করিয়াছি স্থানীয় ও বহিরাগত সকলের জন্য সমান, আর যে ইচ্ছা করে সীমালংঘন করিয়া উহাতে পাপ কার্যের, তাহাকে আমি আস্বাদন করাইব মর্মন্তুদ শাস্তির।
২২-২৬ : এবং স্মরণ কর, যখন আমি ইব্রাহীমের জন্য নির্ধারণ করিয়া দিয়াছিলাম সেই গৃহের স্থান, তখন বলিয়াছিলাম, ‘আমার সঙ্গে কোন শরীক স্থির করিও না এবং আমার গৃহকে পবিত্র রাখিও তাহাদের জন্য যাহারা তাওয়াফ করে এবং যাহারা সালাতে দাঁড়ায়, রুকূ‘ করে ও সিজ্দা করে।
২২-২৭ : এবং মানুষের নিকট হজ্জ - এর ঘোষণা করিয়া দাও, উহারা তোমার নিকট আসিবে পদব্রজে ও সর্বপ্রকার ক্ষীণকায় উষ্ট্রের পিঠে, ইহারা আসিবে দূর - দূরান্তর পথ অতিক্রম করিয়া,
২২-২৮ : যাহাতে তাহারা তাহাদের কল্যাণময় স্থানগুলিতে উপস্থিত হইতে পারে এবং তিনি তাহাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হইতে যাহা রিযিক হিসাবে দান করিয়াছেন উহার উপর নিদির্ষ্ট দিনগুলিতে আল্লাহ্র নাম উচ্চারণ করিতে পারে। অতঃপর তোমরা উহা হইতে আহার কর এবং দুস্থ, অভাবগ্রস্তকে আহার করাও।
২২-২৯ : অতঃপর তাহারা যেন তাহাদের অপরিচ্ছন্নতা দূর করে এবং তাহাদের মানত পূর্ণ করে এবং তাওয়াফ করে প্রাচীন গৃহের।
২২-৩০ : ইহাই বিধান এবং কেহ আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত পবিত্র অনুষ্ঠানগুলির সম্মান করিলে তাহার প্রতিপালকের নিকট তাহার জন্য ইহাই উত্তম। তোমাদের জন্য হালাল করা হইয়াছে গবাদিপশু জন্তু - এইগুলি ব্যতীত যাহা তোমাদেরকে শোনান হইয়াছে। সুতরাং তোমরা বর্জন কর মূর্তিপূজার অপবিত্রতা এবং দূরে থাক মিথ্যা কথন হইতে,
২২-৩১ : আল্লাহ্র প্রতি একনিষ্ঠ হইয়া এবং তাঁহার কোন শরীক না করিয়া ; এবং যে কেহ আল্লাহ্র শরীক করে সে যেন আকাশ হইতে পড়িল, অতঃপর পাখি তাহাকে ছোঁ মারিয়া লইয়া গেল, কিংবা বায়ু তাহাকে উড়াইয়া লইয়া গিয়া এক দূরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করিল।
২২-৩২ : ইহাই আল্লাহ্র বিধান এবং কেহ আল্লাহ্র নিদর্শনাবলীকে সম্মান করিলে ইহা তো তাহার হৃদয়ের তাক্ওয়া - সঞ্জাত।
২২-৩৩ : এই সমস্ত আন‘আমে তোমাদের জন্য নানাবিধ উপকার রহিয়াছে এক নির্দিষ্ট কালের জন্য; অতঃপর উহাদের কুরবানীর স্থান প্রাচীন গৃহের নিকট।
২২-৩৪ : আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কুরবানীর নিয়ম করিয়া দিয়াছি; তিনি তাহাদেরকে জীবনোপকরণস্বরূপ যে সকল চতুষ্পদ জন্তু দিয়াছেন, সেগুলির উপর যেন তাহারা আল্লাহ্র নাম উচ্চারণ করে। তোমাদের ইলাহ্ এক ইলাহ্, সুতরাং তাহারই নিকট আত্মসমর্পণ কর এবং সুসংবাদ দাও বিনীতগণকে -
২২-৩৫ : যাহাদের হৃদয় ভয়ে কম্পিত হয় আল্লাহ্র নাম স্মরণ করা হইলে, যাহারা তাহাদের বিপদ - আপদে ধৈর্য ধারণ করে এবং সালাত কায়েম করে এবং আমি তাহাদেরকে যে রিযিক দিয়াছি তাহা হইতে ব্যয় করে।
২২-৩৬ : এবং উষ্ট্রকে করিয়াছি আল্লাহ্র নিদর্শনগুলির অন্যতম; তোমাদের জন্য উহাতে মঙ্গল রহিয়াছে। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান অবস্থায় উহাদের উপর তোমরা আল্লাহ্র নাম উচ্চারণ কর। যখন উহারা কাত হইয়া পড়িয়া যায় তখন তোমরা উহা হইতে আহার কর এবং আহার করাও ধৈর্যশীল অভাবগ্রস্তকে ও যাচ্ঞাকারী অভাবগ্রস্তকে ; এইভাবে আমি উহাদেরকে তোমাদের অধীন করিয়া দিয়াছি যাহাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
২২-৩৭ : কখনই আল্লাহ্র নিকট পৌঁছায় না উহাদের গোশত্ এবং রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাক্ওয়া। এইভাবে তিনি ইহাদেরকে তোমাদের অধীন করিয়া দিয়াছেন যাহাতে তোমরা আল্লাহ্র শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এইজন্য যে, তিনি তোমাদেরকে পথপ্রদর্শন করিয়াছেন; সুতরাং তুমি সুসংবাদ দাও সৎকর্মপরায়ণ - দেরকে।
২২-৩৮ : অবশ্যই আল্লাহ্ রক্ষা করেন মু’মিনদেরকে, তিনি কোন বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞকে পসন্দ করেন না।
২২-৩৯ : যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হইল তাহাদেরকে যাহারা আক্রান্ত হইয়াছে; কারণ তাহাদের প্রতি অত্যাচার করা হইয়াছে। আল্লাহ্ নিশ্চয়ই তাহাদেরকে সাহায্য করিতে সম্যক সক্ষম;
২২-৪০ : তাহাদেরকে তাহাদের ঘর - বাড়ি হইতে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হইয়াছে শুধু এই কারণে যে, তাহারা বলে, ‘আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্।’ আল্লাহ্ যদি মানব জাতির এক দলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করিতেন, তাহা হইলে বিধ্বস্ত হইয়া যাইত খ্রিস্টান সংসারবিরাগীদের উপাসআন্ নাস্থান, গির্জা, ইয়াহূদীদের উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ - যাহাতে অধিক স্মরণ করা হয় আল্লাহ্র নাম। আল্লাহ্ নিশ্চয়ই তাহাকে সাহায্য করেন যে তাঁহাকে সাহায্য করে। আল্লাহ্ নিশ্চয়ই শক্তিমান, পরাক্রমশালী।
২২-৪১ : আমি ইহাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করিলে ইহারা সালাত কায়েম করিবে, যাকাত দিবে এবং সৎকর্মের নির্দেশ দিবে ও অসৎকর্ম নিষেধ করিবে; আর সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহ্র ইখ্তিয়ারে।
২২-৪২ : এবং লোকেরা যদি তোমাকে অস্বীকার করে তবে উহাদের পূর্বে অস্বীকার করিয়াছিল তো সূরা নূহ্, ‘আদ ও সামূদের সম্প্রদায়,
২২-৪৩ : ইব্রাহীম ও লূতের সম্প্রদায়,
২২-৪৪ : এবং মাদ্ইয়ানবাসীরা আর অস্বীকার করা হইয়াছিল মূসাকেও। আমি কাফিরদেরকে অবকাশ দিয়াছিলাম, অতঃপর তাহাদেরকে শাস্তি দিয়াছিলাম। অতএব কেমন ছিল শাস্তি!
২২-৪৫ : আমি ধ্বংস করিয়াছি কত জনপদ যেইগুলির বাসিন্দা ছিল জালিম। এইসব জনপদ তাহাদের ঘরের ছাদসহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হইয়াছিল এবং কত কূপ পরিত্যক্ত হইয়াছিল ও কত সুদৃঢ় প্রাসোয়াদও।
২২-৪৬ : তাহারা কি দেশ ভ্রমণ করে নাই? তাহা হইলে তাহারা জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন হৃদয় ও শ্রুতিশক্তিসম্পন্ন শ্রবণের অধিকারী হইতে পারিত। বস্তুত চক্ষু তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হইতেছে বক্ষস্থিত হৃদয়।
২২-৪৭ : তাহারা তোমাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করিতে বলে, অথচ আল্লাহ্ তাহার প্রতিশ্রুতি কখনও ভঙ্গ করেন না। তোমার প্রতিপালকের নিকট একদিন তোমাদের গণনার সহস্র বৎসরের সমান;
২২-৪৮ : এবং আমি অবকাশ দিয়াছি কত জনপদকে যখন উহারা ছিল জালিম; অতঃপর উহাদেরকে শাস্তি দিয়াছি এবং প্রত্যাবর্তন আমারই নিকট।
২২-৪৯ : বল, ‘হে মানুষ! আমি তো তোমাদের জন্য এক স্পষ্ট সতর্ককারী;
২২-৫০ : সুতরাং যাহারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাহাদের জন্য আছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা;
২২-৫১ : এবং যাহারা আমার আয়াতকে ব্যর্থ করিবার চেষ্টা করে তাহারাই হইবে জাহান্নামের অধিবাসী।
২২-৫২ : আমি তোমার পূর্বে যে সমস্ত রাসূল কিংবা নবী প্রেরণ করিয়াছি তাহাদের কেহ যখনই কিছু আকাঙ্খা করিয়াছে, তখনই শয়তান তাহার আকাঙ্খায় কিছু প্রক্ষিপ্ত করিয়াছে, কিন্তু শয়তান যাহা প্রক্ষিপ্ত করে আল্লাহ্ তাহা বিদূরিত করেন। অতঃপর আল্লাহ্ তাঁহার আয়াতসমূহকে সু - প্রতষ্ঠিতি করেন এবং আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়;
২২-৫৩ : ইহা এইজন্য যে, শয়তান যাহা প্রক্ষিপ্ত করে তিনি উহাকে পরীক্ষাস্বরূপ করেন তাহাদের জন্য যাহাদের অন্তরে ব্যাধি রহিয়াছে ও যাহারা পাষাণ হৃদয়। নিশ্চয়ই জালিমরা দুস্তর মতভেদে রহিয়াছে।
২২-৫৪ : এবং এইজন্যও যে, যাহাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হইয়াছে তাহারা যেন জানিতে পারে যে, ইহা তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে প্রেরিত সত্য; অতঃপর তাহারা যেন উহাতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাহাদের অন্তর যেন উহার প্রতি অনুগত হয়। যাহারা ঈমান আনিয়াছে তাহাদেরকে অবশ্যই আল্লাহ্ সরল পথে পরিচালিত করেন।
২২-৫৫ : যাহারা কুফরী করিয়াছে তাহারা উহাতে সন্দেহ পোষণ হইতে বিরত হইবে না, যতক্ষণ না উহাদের নিকট কিয়ামত আসিয়া পড়িবে আকস্মিকভাবে, অথবা আসিয়া পড়িবে এক বন্ধ্যা দিনের শাস্তি।
২২-৫৬ : সেই দিন আল্লাহ্রই আধিপত্য; তিনিই তাহাদের বিচার করিবেন। সুতরাং যাহারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাহারা অবস্থান করিবে সুখদ কাননে।
২২-৫৭ : আর যাহারা কুফরী করে ও আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে তাহাদেরই জন্য রহিয়াছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।
২২-৫৮ : এবং যাহারা আল হিজরত করিয়াছে আল্লাহ্র পথে, অতঃপর নিহত হইয়াছে অথবা মারা গিয়াছে তাহাদেরকে আল্লাহ্ অবশ্যই উৎকৃষ্ট জীবিকা দান করিবেন; আর নিশ্চয়ই আল্লাহ্, তিনি তো সর্বোৎকৃষ্ট রিযিকদাতা।
২২-৫৯ : তিনি তাহাদেরকে অবশ্যই এমন স্থানে দাখিল করিবেন যাহা তাহারা পসন্দ করিবে এবং আল্লাহ্ তো সম্যক প্রজ্ঞাময়, পরম সহনশীল।
২২-৬০ : ইহাই হইয়া থাকে, কোন ব্যক্তি নিপীড়িত হইয়া তুল্য প্রতিশোধ গ্রহণ করিলে ও পুনরায় সে অত্যাচারিত হইলে আল্লাহ্ তাহাকে অবশ্যই সাহায্য করিবেন ; আল্লাহ্ নিশ্চয়ই পাপ মোচনকারী, ক্ষমাশীল।
২২-৬১ : উহা এইজন্য যে, আল্লাহ্ রাত্রিকে প্রবিষ্ট করান দিবসের মধ্যে এবং দিবসকে প্রবিষ্ট করান রাত্রির মধ্যে এবং আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সম্যক দ্রষ্টা;
২২-৬২ : এইজন্যও যে, আল্লাহ্, তিনিই সত্য এবং উহারা তাঁহার পরিবর্তে যাহাকে ডাকে উহা তো অসত্য, এবং আল্লাহ্, তিনিই তো সমুচ্চ, মহান।
২২-৬৩ : তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ্ বারি বর্ষণ করেন আকাশ হইতে যাহাতে সবুজ শ্যামল হইয়া উঠে পৃথিবী? নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সম্যক সূক্ষ্মদর্শী, পরিজ্ঞাত।
২২-৬৪ : আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে তাহা তাঁহারই, এবং আল্লাহ্, তিনিই তো অভাবমুক্ত, প্রশাংসার্হ।
২২-৬৫ : তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ্ তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করিয়াছেন পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে তৎসমুদয়কে এবং তাঁহার নির্দেশে সমুদ্রে বিচরণশীল নৌযানসমূহকে? আর তিনিই আকাশকে স্থির রাখেন যাহাতে উহা পতিত না হয় পৃথিবীর উপর তাঁহার অনুমতি ব্যতীত। আল্লাহ্ নিশ্চয়ই মানুষের প্রতি দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।
২২-৬৬ : এবং তিনিই তোমাদেরকে জীবন দান করিয়াছেন ; অতঃপর তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাইবেন, পুনরায় তোমাদেরকে জীবন দান করিবেন। মানুষ তো অতি মাত্রায় অকৃতজ্ঞ।
২২-৬৭ : আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য নির্ধারিত করিয়া দিয়াছি ‘ইবাদত পদ্ধতি - যাহা উহারা অনুসরণ করে। সুতরাং উহারা যেন তোমার সঙ্গে বিতর্ক না করে এই ব্যাপারে। তুমি উহাদেরকে তোমার প্রতিপালকের দিকে আহ্বান কর, তুমি তো সরল পথেই প্রতিষ্ঠিত।
২২-৬৮ : উহারা যদি তোমার সঙ্গে বিতণ্ডা করে তবে বলিও, ‘তোমরা যাহা কর সে সম্বন্ধে আল্লাহ্ সম্যক অবহিত।
২২-৬৯ : ‘তোমরা যে বিষয়ে মতভেদ করিতেছ আল্লাহ্ কিয়ামতের দিন সে বিষয়ে তোমাদের মধ্যে বিচার - মীমাংসা করিয়া দিবেন।’
২২-৭০ : তুমি কি জান না যে, আকাশ ও পৃথিবীতে যাহা কিছু রহিয়াছে আল্লাহ্ তাহা জানেন ? এই সকলই আছে এক কিতাবে ; নিশ্চয়ই ইহা আল্লাহ্র নিকট সহজ।
২২-৭১ : এবং উহারা ‘ইবাদত করে আল্লাহ্র পরিবর্তে এমন কিছুর যাহার সম্পর্কে তিনি কোন দলীল প্রেরণ করেন নাই এবং যাহার সম্বন্ধে তাহাদের কোন জ্ঞান নাই। আর জালিমদের কোন সাহায্যকারী নাই।
২২-৭২ : এবং উহাদের নিকট আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হইলে তুমি কাফিরদের মুখমণ্ডলে অসন্তোষ লক্ষ্য করিবে। যাহারা উহাদের নিকট আমার আয়াত তিলাওয়াত করে তাহাদেরকে উহারা আক্রমণ করিতে উদ্যত হয়। বল, ‘তবে কি আমি তোমাদেরকে ইহা অপেক্ষা মন্দ কিছুর সংবাদ দিব? - ইহা আগুন। এই বিষয়ে আল্লাহ্ প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন কাফিরদেরকে এবং ইহা কত নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল।’
২২-৭৩ : হে মানুষ ! একটি উপমা দেওয়া হইতেছে, মনোযোগ সহকারে উহা শ্রবণ কর : তোমরা আল্লাহ্র পরিবর্তে যাহাদেরকে ডাক তাহারা তো কখনও একটি মাছিও সৃষ্টি করিতে পারিবে না, এই উদ্দেশ্যে তাহারা সকলে একত্র হইলেও। এবং মাছি যদি কিছু ছিনাইয়া লইয়া যায় তাহাদের নিকট হইতে, ইহাও তাহারা উহার নিকট হইতে উদ্ধার করিতে পারিবে না। অন্বেষক ও অন্বেষিত কতই দুর্বল;
২২-৭৪ : উহারা আল্লাহ্র যথোচিত মর্যাদা উপলদ্ধি করে না, আল্লাহ্ নিশ্চয়ই ক্ষমতাবান, পরাক্রমশালী।
২২-৭৫ : আল্লাহ্ ফিরিশ্তাদের মধ্য হইতে মনোনীত করেন বাণীবাহক এবং মানুষের মধ্য হইতেও ; আল্লাহ্ তো র্সবশ্রোতা, সম্যক দ্রষ্টা।
২২-৭৬ : তাহাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যাহা কিছু আছে তিনি তাহা জানেন এবং সমস্ত বিষয় আল্লাহ্র নিকট প্রত্যাবর্তিত হইবে।
২২-৭৭ : হে মু’মিনগণ ! তোমরা রুকূ‘ কর, সিজ্দা কর এবং তোমাদের প্রতিপালকের ‘ইবাদত কর ও সৎকর্ম কর, যাহাতে সফলকাম হইতে পার।
২২-৭৮ : এবং জিহাদ কর আল্লাহ্র পথে যেভাবে জিহাদ করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে মনোনীত করিয়াছেন। তিনি দীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কঠোরতা আরোপ করেন নাই। ইহা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের মিল্লাত। তিনি পূর্বে তোমাদের নামকরণ করিয়াছেন ‘মুসলিম’ এবং এই কিতাবেও ; যাহাতে রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষীস্বরূপ হয় এবং তোমরা সাক্ষীস্বরূপ হও মানব জাতির জন্য। সুতরাং তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহ্কে অবলম্বন কর ; তিনিই তোমাদের অভিভাবক, কত উত্তম অভিভাবক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী তিনি !