দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহ্র নামে,
নিচের ▶ বাটনে ক্লিক করুন৩১-১ : আলিফ - লাম - মীম;
৩১-২ : এইগুলি জ্ঞানগর্ভ কিতাবের আয়াত,
৩১-৩ : পথনির্দেশ ও দয়াস্বরূপ সৎকর্মপরায়ণদের জন্য;
৩১-৪ : যাহারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয়, আর তাহারাই আখিরাতে নিশ্চিত বিশ্বাসী;
৩১-৫ : তাহারাই তাহাদের প্রতিপালকের নির্দেশিত পথে আছে এবং তাহারাই সফলকাম।
৩১-৬ : মানুষের মধ্যে কেহ কেহ অজ্ঞতাবশত আল্লাহ্র পথ হইতে বিচ্যুত করিবার জন্য অসার বাক্য ক্রয় করিয়া নেয় এবং আল্লাহ্র পথ লইয়া ঠাট্টা - বিদ্রপ করে। উহাদেরই জন্য রহিয়াছে অবমাননাকর শাস্তি।
৩১-৭ : যখন উহার নিকট আমার আয়াত অবৃত্তি করা হয় তখন সে দম্ভভরে মুখ ফিরাইয়া নেয় যেন সে ইহা শুনিতে পায় নাই, যেন উহার কর্ণ দুইটি বধির ; অতএব উহাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও।
৩১-৮ : যাহারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাহাদের জন্য আছে সুখদ কানন;
৩১-৯ : সেখানে তাহার স্থায়ী হইবে। আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি সত্য। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
৩১-১০ : তিনি আকাশমণ্ডলী নির্মাণ করিয়াছেন স্তম্ভ ব্যতীত - তোমরা ইহা দেখিতেছ; তিনিই পৃথিবীতে স্থাপন করিয়াছেন পর্বতমালা যাহাতে ইহা তোমাদেরকে লইয়া ঢলিয়া না পড়ে এবং ইহাতে ছড়াইয়া দিয়াছেন সর্বপ্রকার জীবজন্তু। এবং আমিই আকাশ হইতে বারি বর্ষণ করিয়া ইহাতে উদ্গত করি সর্বপ্রকার কল্যাণকর উদ্ভিদ।
৩১-১১ : ইহা আল্লাহ্র সৃষ্টি ! তিনি ব্যতীত অন্যেরা কী সৃষ্টি করিয়াছে আমাকে দেখাও। সীমালংঘনকারীরা তো স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রহিয়াছে।
৩১-১২ : আমি তো লুকমানকে জ্ঞান দান করিয়াছিলাম এবং বলিয়াছিলাম যে, আল্লাহ্র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তো তাহা করে নিজেরই জন্য এবং কেহ অকৃতজ্ঞ হইলে আল্লাহ্ তো অভাবমুক্ত, প্রশংসার্হ।
৩১-১৩ : স্মরণ কর, যখন লুক্মান উপদেশচ্ছলে তাহার পুত্রকে বলিয়াছিল, ‘হে বৎস! আল্লাহ্র কোন শরীক করিও না। নিশ্চয়ই শির্ক চরম জুলুম।’
৩১-১৪ : আমি তো মানুষকে তাহার পিতামাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়াছি। জননী সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট বরণ করিয়া গর্ভে ধারণ করে এবং তাহার দুধ ছাড়ান হয় দুই বৎসরে। সুতরাং আমার প্রতি ও তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমারই নিকট।
৩১-১৫ : তোমার পিতামাতা যদি তোমাকে পীড়াপীড়ি করে আমার সমকক্ষ দাঁড় করাইতে যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নাই, তুমি তাহাদের কথা মানিও না, তবে পৃথিবীতে তাহাদের সঙ্গে বসবাস করিবে সদ্ভাবে এবং যে বিশুদ্ধচিত্তে আমার অভিমুখী হইয়াছে তাহার পথ অবলম্বন কর, অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই নিকট এবং তোমরা যাহা করিতে সে বিষয়ে আমি তোমাদেরকে অবহিত করিব।
৩১-১৬ : ‘হে বৎস ! ক্ষুদ্র বস্তুটি যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় এবং উহা যদি থাকে শিলাগর্ভে অথবা আকাশে কিংবা মৃত্তিকার নিচে, আল্লাহ্ তাহাও উপস্থিত করিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবগত।
৩১-১৭ : ‘হে বৎস ! সালাত কায়েম করিও, সৎকর্মের নির্দেশ দিও আর অসৎ কর্মে নিষেধ করিও এবং আপদে - বিপদে ধৈর্য ধারণ করিও। ইহাই তো দৃঢ়সংকল্পের কাজ।
৩১-১৮ : ‘অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করিও না এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ করিও না ; নিশ্চয়ই আল্লাহ্ কােন উদ্ধত, অহংকারীকে পসন্দ করেন না।
৩১-১৯ : ‘তুমি পদক্ষেপ করিও সংযতভাবে এবং তোমার কণ্ঠস্বর নিচু করিও; নিশ্চয়ই স্বরের মধ্যে গর্দভের স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।’
৩১-২০ : তোমরা কি দেখ না, আল্লাহ্ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে সমস্তই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করিয়াছেন এবং তোমাদের প্রতি তাঁহার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করিয়াছেন? মানুষের মধ্যে কেহ কেহ অজ্ঞতাবশত আল্লাহ্ সম্বন্ধে বিতণ্ডা করে, তাহাদের না আছে পথনির্দেশক আর না আছে কোন দীপ্তিমান কিতাব।
৩১-২১ : উহাদেরকে যখন বলা হয়, ‘আল্লাহ্ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তাহা অনুসরণ কর।’ উহারা বলে, ‘বরং আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে যাহাতে পাইয়াছি তাহারই অনুসরণ করিব।’ শয়তান যদি উহাদেরকে জ্বলন্ত অগ্নির শাস্তির দিকে আহ্বান করে, তবুও কি?
৩১-২২ : যে কেহ আল্লাহ্র নিকট আত্মসর্মপণ করে এবং সৎকর্মপরায়ণ হয় সে তো দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এক মযবুত হাতল, যাবতীয় কর্মের পরিণাম আল্লাহ্র ইখ্তিয়ারে।
৩১-২৩ : আর কেহ কুফরী করিলে তাহার কুফরী যেন তোমাকে ক্লিষ্ট না করে। আমারই নিকট উহাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি উহাদেরকে অবহিত করিব উহারা যাহা করিত। অন্তরে যাহা রহিয়াছে সে সম্বন্ধে আল্লাহ্ সবিশেষ অবহিত।
৩১-২৪ : আমি উহাদেরকে জীবনোপকরণ ভোগ করিতে দিব স্বল্পকালের জন্য। অতঃপর উহাদেরকে কঠিন শাস্তি ভোগ করিতে বাধ্য করিব।
৩১-২৫ : তুমি যদি উহাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, ‘আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী কে সৃষ্টি করিয়াছেন ?’ উহারা অবশ্যই বলিবে, ‘আল্লাহ’। বল, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহ্রই’, কিন্তু উহাদের অধিকাংশই জানে না।
৩১-২৬ : আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে তাহা আল্লাহ্রই ; আল্লাহ্, তিনি তো অভাবমুক্ত, প্রশংসার্হ।
৩১-২৭ : পৃথিবীর সমস্ত বৃক্ষ যদি কলম হয় আর সমুদ্র হয় কালি এবং ইহার সঙ্গে আরও সাত সমুদ্র যুক্ত হয়, তবুও আল্লাহ্র বাণী নিঃশেষ হইবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
৩১-২৮ : তোমাদের সকলের সৃষ্টি ও পুনরুত্থান একটি প্রাণীর সৃষ্টি ও পুনরুত্থানেরই অনুরূপ। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সম্যক দ্রষ্টা।
৩১-২৯ : তুমি কি দেখ না আল্লাহ্ রাত্রিকে দিবসে এবং দিবসকে রাত্রিতে পরিণত করেন ? তিনি চন্দ্র - সূর্যকে করিয়াছেন নিয়মাধীন, প্রত্যেকটি বিচরণ করে নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত ; তোমরা যাহা কর আল্লাহ্ সে সম্পর্কে অবহিত।
৩১-৩০ : এইগুলি প্রমাণ যে, আল্লাহ্ই সত্য এবং উহারা তাঁহার পরিবর্তে যাহাকে ডাকে, তাহা মিথ্যা। আল্লাহ্, তিনি তো সমুচ্চ, মহান।
৩১-৩১ : তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ্র অনুগ্রহে নৌযানগুলি সমুদ্রে বিচরণ করে, যদ্দ্বারা তিনি তোমাদেরকে তাঁহার নিদর্শনাবলীর কিছু প্রদর্শন করেন ? ইহাতে অবশ্যই নিদর্শন রহিয়াছে প্রত্যেক ধৈর্যশীল কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য।
৩১-৩২ : যখন তরংগ উহাদেরকে আচ্ছন্ন করে মেঘচ্ছায়ার মত তখন উহারা আল্লাহ্কে ডাকে তাহার আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হইয়া। কিন্তু যখন তিনি উহাদেরকে উদ্ধার করিয়া স্থলে পৌঁছান তখন উহাদের কেহ কেহ সরল পথে থাকে ; কেবল বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিই আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করে।
৩১-৩৩ : হে মানুষ ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর এবং ভয় কর সেই দিনের, যখন পিতা সন্তানের কোন উপকারে আসিবে না, সন্তানও কোন উপকারে আসিবে না তাহার পিতার। আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি সত্য; সুতরাং পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রতারিত না করে এবং সেই প্রবঞ্চক যেন তোমাদেরকে কিছুইতেই আল্লাহ্ সম্পর্কে প্রবঞ্চিত না করে।
৩১-৩৪ : কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহ্র নিকট রহিয়াছে, তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনি জানেন যাহা জরায়ুতে আছে। কেহ জানে না আগামীকল্য সে কি অর্জন করিবে এবং কেহ জানে না কােন্ স্থানে তাহার মৃত্যু ঘটিবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে অবহিত।